অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি? (What is Economic System)

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি সমাজ উৎপাদন, সম্পদের বন্টন ও বিনিময় এবং দ্রব্য ও সেবার ভোগ এসবের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – ১. ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা, ২. সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা, ৩. মিশ্র অর্থব্যবস্থা ও ৪. ইসলামী অর্থব্যবস্থা।

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? 

যে অর্থব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে, তাকে ধনতান্ত্রিক  বা বাজার অর্থব্যবস্থা বা বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা বাজার অর্থব্যবস্থা বলে।

এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম কোথায় বিনিয়োগ করবে, কি উৎপাদন বা বিক্রয় করবে, কি দামে দ্রব্য বা সেবা বিনিময় করবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকে।

অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারের চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

এখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

বর্তমানে পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রায় কাছাকাছি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

১. সম্পদের ব্যক্তি মালিকানাঃ- ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণ ব্যক্তি মালিকানায় থাকে।

 ২. অবাধ প্রতিযোগিতাঃ- সরকারের কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুক্ত প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকে।

৩. উৎপাদনের স্বাধীনতঃ- এখানে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিদ্যমান। সম্পদের মালিকরা কি, কখন এবং কিভাবে উৎপাদন করবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

৪. ভোক্তার স্বাধীনতাঃ- ভোক্তা কি, কখন, কি পরিমান এবং কত দামে পণ্য বা সেবা ক্রয় করবে সে স্বাধীনতা তার রয়েছে। ভোক্তা চেষ্টা করে সর্বোত্তম পণ্যটি তার সুবিধা মত সময়ে সর্বনিম্ন দামে ক্রয় করতে।

৫. দাম ব্যবস্থাঃ- ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারের চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়। এখানে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে দরকষাকষির সুযোগ থাকে।

৬. মুনাফাঃ- উৎপাদনের উপকরণ সমুহের মালিকরা সর্বোচ্চ দামে তাদের উপকরণসমুহ বিক্রয় করতে চায়। অন্যদিকে ফার্ম বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের উৎপাদন খরচ সর্বনিম্ন রেখে সর্বোচ্চ দামে পণ্য বিক্রয় করতে চায়। এভাবে উভয় দিক হতে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত হয়।

৭. সমাজের শ্রেনি বিভাগঃ- সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় থাকার কারণে একশ্রেণির মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। অন্যদিকে আরেক শ্রেনির হাতে সম্পদের পরিমান দিন দিন কমতে থাকে। ফলে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত প্রভৃতি শ্রেনির উদ্ভব হয়।

৮. অসম বন্টনঃ- ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বন্টনে অসমতা বা বৈষম্য দেখা যায়। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা থাকায় আয় বন্টন অসম হয়। এ ক্ষেত্রে যার সম্পদ যত বেশি তার আয় তত বেশি। বর্ধিত আয় দিয়ে সে আরো সম্পদের মালিক হয়। এবং নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের সম্পদ হারাতে থাকে। মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পায় না।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা একটি নির্দেশমূলক বা নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এটি ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ঠিক বিপরীত।

যে অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন উপকরণের মালিকানা এবং সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় তাকে নিয়ন্ত্রিত বা নির্দেশমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

এই অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার কোন ভূমিকা থাকে না এবং উৎপাদিত দ্রব্য ভোগ ও বন্টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

যেহেতু, সমস্ত উৎপাদন উপকরণ রাষ্ট্রের হাতে থাকে, রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেয় কি এবং কিভাবে করা হবে। রাষ্ট্র উৎপাদিত দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করে এবং কিভাবে বন্টন হবে সে সিদ্ধান্তও রাষ্ট্র নেয়।

এখানে বাজার ব্যবস্থার স্বাধীনতা বা মুক্ত পছন্দের (Free choice) সুযোগ থাকেনা। এজন্যই এই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

১৯১৭ সালে রাশিয়ার ভ ই লেনিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এই অর্থব্যবস্থা চালু করেন। পরবর্তীতে চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, সাবেক পূর্ব জার্মানিসহ কিছু দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু হয়।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

১. সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা। এ ধরণের অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদন উপকরণ ব্যক্তি মালিকানায় থাকে না। সকল সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত।

২. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তঃ অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড, যেমন – কি উৎপাদন করা হবে, কি পরিমানে উৎপাদন করা হবে, কার জন্য উৎপাদন করা হবে, শ্রমিকের মজুরি, উৎপাদিত পণ্য বা সেবার দাম, কিভাবে বন্টন করা হবে, উন্নয়নের সকল পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের একক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়।

৩. সামাজিক কল্যাণঃ সমাজতন্ত্রে মানুষের মৌলিক অধিকারসমুহ যেমন – খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা রাষ্ট্র নিশ্চিত করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে অসমতা বা বৈষম্য দূর হয়ে সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ সাধিত হয়।

৪. ভোগ ও বন্টন ব্যবস্থাঃ এ অর্থব্যবস্থায় কোন দ্রব্য কতটুকু উৎপাদিত হবে, কে কতটুকু ভোগ করবে তা রাষ্ট্রীয় ভাবেই নির্ধারিত হয়। এখানে সমাজে যে যতটুকু অবদান রাখে সে অনুপাতে বন্টন নিশ্চিত করা হয়। ফলে এখানে জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়।

৫. নির্ধারিত দাম ব্যবস্থাঃ এখান স্বয়ংক্রিয় ভাবে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয় না। বাজার ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে ক্রেতা বিক্রেতার দরকষাকষির সুযোগ নাই। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারিত হয় বিধায় অবাধ প্রতিযোগিতা নাই।

৬. মুদ্রাস্ফীতির অনুপস্থিতিঃ যেহেতু সমাজতান্ত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে তাই দ্রব্য বা সেবার দাম বেড়ে যেতে পারে না। সেজন্য মুদ্রাস্ফীতিও ঘটে না।

৭. শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থাঃ সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তি পর্যায়ে সম্পদের মালিকানা না থাকায় শ্রেনী বৈষম্য থাকে না। সম্পদের সুষম বন্টনের জন্য সমাজে শোষণ অনুপস্থিত।

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি

ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সংমিশ্রণই হচ্ছে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা মিশ্র অর্থব্যবস্থা । 

এটি এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদন, ভোগ বন্টন ইত্যাদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার সাথে সাথে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সংমিশ্রণ থাকে। আবার সরকারও সম্পদের বন্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই বিশুদ্ধ ধনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়। 

অধিকাংশ গনতান্ত্রিক দেশে এ দুই ধরনের অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমুহ দেখা যায়। অর্থাৎ এসব দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

বৃটেন, কানাডা, জাপান, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা প্রচলিত।

তবে দেশ ভেদে এই মিশ্রনে দু ধরণের অর্থব্যবস্থার উপাদানসমুহ বিভিন্ন মাত্রায় থাকে।

 

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

১. সম্পদের মালিকানাঃ এ অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানা বিদ্যমান। আবার উৎপাদনের উপায়সমুহের ক্ষেত্রেও ব্যক্তি মালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানা বিদ্যমান।

অনেক কলকারখানা সরকারিভাবে পরিচালিত হয়, আবার বেসরকারিও আছে। বিভিন্ন কর্পোরেশন সরকার কর্তৃক পরিচালিত। বাস যোগাযোগ ব্যক্তি মালিকানায়, কিন্তু বিআরটিসি বাসের মালিক সরকার। আমাদের দেশে রেলের মালিক সরকার, অনেক দেশে রেল বেসরকারি খাতে।

২. ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের সহাবস্থানঃ মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত ও সরকারি খাত একত্রে পাশাপাশি অবস্থান করে। এখানে ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের শিল্প কলকারখানা একত্রে কাজ করে যেমন – সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, পাবলিক ও প্রাইভেট কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমুহ।

এই অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত খাতে মুনাফা অর্জনই লক্ষ্য ; কিন্তু সরকারি খাতে মুনাফা অর্জনের সাথে সাথে সামাজিক কল্যাণকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এই অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত খাতের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

৩. অর্থনৈতিক পরিকল্পনাঃ এখানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে বেসরকারি খাতের পরিকল্পনা বেসরকারি উদ্যোক্তারা করে থাকে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করা হয়।

৪. দাম ব্যবস্থাঃ এই অর্থনীতিতে বাজার অর্থনীতির দাম ব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এখানে দ্রব্য ও সেবার দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। দাম বাড়লে আবার যোগান বাড়ে।

তবে সরকার জনগণের কথা বিবেচনা করে দাম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন – আমদানি শুল্ক পরিবর্তন, বিশেষ বিশেষ দ্রব্য ও সেবার উপর করের হার পরিবর্তন, সরকারি তত্বাবধানে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রয়, বিশেষ বিশেষ পন্য উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান, বাজার দর মনিটরিং ইত্যাদি।

৫. ব্যক্তি স্বাধীনতাঃ মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীতা রক্ষিত হয়। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তি কি পরিমান দ্রব্য বা সেবা ভোগ করবে এবং কি দ্রব্য উৎপাদন করবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে না।

তবে সমাজের স্বার্থে কোন কোন সময় ভোগ বা বিপননের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে।

৬. বন্টন ব্যবস্থাঃ যেহেতু এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা বিদ্যমান, সেহেতু জাতীয় আয়ের সুষম বন্টন এখানে নিশ্চিত হয় না। এখানে আয় ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য বা অসমতা দেখা যায়। যার সম্পদ যত বেশি তার আয় তত বেশি। আবার আয় বৃদ্ধির ফলে তার সম্পদ আরো বেড়ে যায়।

ইসলামী অর্থব্যবস্থা

এটি একটি ধর্মীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

ইসলামী অর্থব্যবস্থা শরীয়াহ-এর আলোকে প্রতিষ্ঠিত। শরীয়াহ-এর মূল ভিত্তি হচ্ছে কোরান ও সুন্নাহ।

যে অর্থব্যবস্থায় ইসলামের বিধান অনুসারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় এবং কুরান ও সুন্নাহর আলোকে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা হয় তাকে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মানুষ জাতি ও সমাজের কল্যাণ সাধনে সীমিত সম্পদের ব্যবহার করা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়।

ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

১. সম্পদের মালিকানাঃ ইসলামের মূল কথা হচ্ছে আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে তার মালিক হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। মানুষ কেবল তাঁর নির্দেশে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং হেফাজত করবে।

২. হারাম ও হালালের বিধানঃ এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে হারাম ও হালাল বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী হালাল পথে উপার্জন করতে হবে এবং হারাম পথ পরিহার করতে হবে।

৩. সম্পদের বন্টনঃ ইসলামী অর্থনীতিতে বন্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ধনীর নিকট থেকে অর্থ আদায় করে তা গরীবের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্টনের ক্ষেত্রে যে সব হাতিয়ার ব্যবহার করা হয় তা হলো যাকাত, ওশর, সাদকাহ, খারাজ ইত্যাদি।

৪. সামাজিক নিরাপত্তাঃ সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, কালোবাজারি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সরকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় রাখে।

৫. শ্রমের মর্যাদাঃ ইসলামী অর্থনীতিতে শ্রমিক শোষণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার মজুরি পরিশোধ করতে হবে।

৬. দাম ব্যবস্থাঃ এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সরকার বা কোন একক পক্ষ দাম নির্ধারন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বাজারে অসংখ্য ক্রেতা বিক্রেতার চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম নির্ধারিত হয়। এটি ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ন্যায় স্বয়ংক্রিয় বাজার দাম ব্যবস্থার অনুরূপ।