Table of Contents

হাঁসের খামার, হাঁসের জাত ও হাঁস পালন ব্যবস্থাপনা

খামারে হাঁস পালনের উদ্দেশ্যঃ

  • হাঁস পালন করে দুস্থ, কর্মহীন ও বিধবা মহিলাদের কর্মসংস্থান
  • হাঁসের খামার স্থাপন করে বেকার ও আংশিক বেকার যুবক-যুবতীদের আংশিক বা পূর্ণ কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূরকরণ
  • প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন
  • পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ
  • হাঁসের ডিম, বাচ্চা, বাড়ন্ত হাঁস, ডিমপাড়া শেষের হাঁস ও বাড়তি পুরুষ হাঁস বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন এবং তা দিয়ে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন
  • বাড়িতে বসে অল্প পুঁজি খাটিয়ে অধিক লাভজনক উদ্যোগ গ্রহণ
  • মোট জাতীয় উৎপাদন ও মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধিকরণ।

হাঁসের খামার স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়সমুহঃ

  • পারিবারিক ক্ষুদ্র হাঁসের খামার বাড়িতে বা বসত ভিটায় করা যায়।
  • মাঝারি ও বৃহৎ আকারের বানিজ্যিক খামার স্থাপনের জন্য লোকালয় হতে দূরে শুষ্ক, উচু, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা বিদ্যমান এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
  • যাতায়াতের সুব্যবস্তা থাকতে হবে।
  • পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • বিদ্যুতের ব্যবস্তা থাকতে হবে।
  • হাঁস জলাশয় (যেমন নদী, নাংআ, খাল, বিল, পুকুর, হাওড় বাওড় ইত্যাদি) থেকে প্রাকৃতিক খাবার সংগ্রহ করে খেতে পারে। তাতে হাঁসের খাদ্য বাবদ খরচ কম হয়। তাই এই সুবিধা সম্পন্ন এলাকা হাঁসের খামারের জন্য বিশেষ উপযোগী।
  • বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে।

হাঁসের জাত পরিচিতিঃ

বাংলাদেশে পালন উপযোগী কয়েক প্রকার হাসের জাত সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো-

খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসঃ

উৎপত্তি স্থানঃ ইংল্যান্ড।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • পালকের রং খাকী
  • ডিমের রং সাদা
  • ঠোঁট নীলাভ বা কালচে
  • বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ২৫০ – ৩০০ টি
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের গড় ওজন ২.০২.৫ কেজি।

খাকী ক্যাম্পবেল

জিনডিং জাতের হাঁসঃ

উৎপত্তি স্থানঃ চীন।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • হাঁসের পালকের রং কালো ও সাদা মিশ্রিত।
  • হাঁসির পালকের রং খাকীর মাঝে কালো ফোটা মিশ্রিত।
  • ডিমের রং নীলাভ।
  • ঠোঁট নীলাভ হলদে।
  • বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ২৭০ – ৩২৫ টি
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের গড় ওজন ২.০২.৫ কেজি।

জিনডিং হাঁস

পিকিং জাতের হাঁসঃ

উৎপত্তি স্থানঃ চীন।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • পালকের রং সাদা।
  • ডিমের রং সাদা।
  • ঠোঁট হলুদ।
  • বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ১৫০ টি।
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের গড় ওজন ৪.৫ কেজি, হাঁসির গড় ওজন ৪.০ কেজি।
  • মূলতঃ মাংসের জাত।

    পিকিং হাঁস

মাসকোভি জাতের হাঁসঃ

উৎপত্তি স্থানঃ দক্ষিণ আমেরিকা।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • পালকের রং কালো ও সাদা অথবা সাদা কালো মিশ্রিত।
  • লাল ঝুঁটি আছে।
  • ডিমের রং সাদা।
  • বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ১২০ টি
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের গড় ওজন ৫.০ কেজি, হাঁসির গড় ওজন ৪.০ কেজি।
  • মূলতঃ মাংসের জাত। তবে, শোভা বর্ধন ও সৌখিনতার জন্যও পালন করা হয়।

মাসকোভি হাঁস

ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁসঃ

উৎপত্তি স্থানঃ ভারত।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • পালকের রং সাদা অথবা বিভিন্ন রং-এর মিশ্রন।
  • ডিমের রং সাদা।
  • বার্ষিক গড় ডিম উৎপাদন ১৮০ টি
  • প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের গড় ওজন ১.৫ – ৩.০ কেজি।

    ইন্ডিয়ান রানার হাঁস

হাঁসের বাসস্থানঃ

  • হাঁসের বাসস্থান এমন হতে তবে যা রোদ, বৃস্টি ও ঠান্ডা থেকে হাঁসকে মুক্ত রাখতে পারে।
  • ঘর বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে উচু জায়গায় স্থাপন করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচওলের সুযোগ থাকতে হবে।
  • খামার আশে পাশের খামার, বসতবাড়ি ও জন চলাচলের রাস্তা থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।
  • এক খামার থেকে অন্য খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ২০০ মিটার হতে হবে।
  • খামারের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • বিষ্ঠা ও লিটার ব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • মুরগির খামারের সন্নিকটে হাঁসের খামার স্থাপন করা যাবে না।
  • প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমান হাঁসের জাত, বয়স ও পালন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে।
  • আবদ্ধ অবস্থায় প্রতিটি হাঁসের জন্য সাধারণতঃ ৩-৪ বর্গফুট এবং রান টাইপ পালন ব্যবস্থায় প্রতিটি হাঁসের জন্য ১৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়।

হাঁসের ঘরের তাপমাত্রাঃ

ঘরের তাপ ৪.৪ ডিগ্রি সেঃ এর কম বা ৩৭.৮ ডিগ্রি সেঃ এর বেশি হলে তা হাঁসের জন্য ক্ষতিকর। ঘরের তাপমাত্রা সাধারণতঃ ১২.৮ ডিগ্রি সেঃ  হতে ২৩.৯ ডিগ্রি সেঃ পর্যন্ত হলে ভালো হয়।

হাঁসের ঘরের আর্দ্রতাঃ

হাঁসের ঘরের আর্দ্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবতাওয়া ভালো থাকলে হাঁসের শারীরিক বৃদ্ধি, পশম গজানো এবং ডিমের উৎপাদন ভালো হয়। তা ছাড়া অপ্রাকৃতিক পরিবেশ ডিম উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব ফেলে। আর্দ্রতা ৩০% এর কম হলে পালক ঝরে পড়ে। ঘরের আর্দ্রতা ৭০% এর বেশি হলে কক্সিডিয়া ও ক্রিমির উৎপাত বাড়ে এবং হাঁসকে অস্থির অবস্থায় দেখা যায়। হাঁসের ঘরের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে লিটার শুষ্ক ও পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা রাখতে হবে।

হাঁসের ঘরের আলো (কৃত্রিম) ব্যবস্থাপনা

সঠিক আলোক ব্যবস্থাপনা হাঁসের দৈহিক গঠন, বৃদ্ধি, এবং ডিম উৎপাদনে সহায়তা করে। ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চার জন্য রাতে আলোর ব্যবস্থা দরকার। তবে এদেরকে অন্ধকারের সাথে পরিচিত করাতে মাঝে মাঝে আলো বন্ধ রাখতে হয়। আলোক সরবরাহ সঠিক হলে হাঁস খাদ্য বীশি খাবে এবং দৈহিক ওজন বাড়বে। ডিম দেযা হাঁসের জন্য দৈনিক ১৪ – ১৬ ঘন্টা আলো সরবরাহ করতে হয়।

হাঁসের ঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা বা ভেন্টিলেশন

ঘরের দেয়ালের শতকরা ৪০ ভাগ হিসাবে লম্বালম্বি বেড়ায় তারের জাল বা বাঁশের সাহায্যে বেড়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

হাঁসের ঘরের লিটার বা বিছানা

হাঁসের ঘরের লিটার বা বিছানা সর্বদা শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। সুতরাং আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে এমন কিছু লিটার হিসাবে ব্যবহার করতে হয়। ধানের খড়, ধানের তুষ, কাঠের গুড়া ইত্যাদি লিটার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ধানের তুষ বা কাঠের গুড়া ব্যবহার করলে উচু লিটার (৩-৪ ইঞ্চি) বা পাতলা লিটার (১-২ ইঞ্চি) ব্যবহার করা যায়।

হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা

বাচ্চা ফুটার পর থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে বাচ্চা পালন করাকে ব্রুডিং বলে। জন্ম পালকে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে না বলে কৃত্রিম তাপের প্রয়োজন হয়। ব্রুডিংকালে বাচ্চাকে সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হয়। সাধারণতঃ ১ম সপ্তাহে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট, ১ম সপ্তাহে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট, ২য় সপ্তাহে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, ৩য় সপ্তাহে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট, ৪র্থ সপ্তাহে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ব্রুডিং করতে হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নির্ধারিত স্থানটি ব্রুডগার্ড দ্বারা বেষ্টিত করতে হয়। উপরে একটি হোবার স্থাপন করতে হবে। হোবারে বৈদ্যুতিক বাল্ব লাগানো থাকে। হোবারের অবস্থান উঠা-নামা করানোর মাধ্যমে  ব্রুডারগার্ডের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা কমানো বা বাড়ানো হয়ে থাকে। সাধারণতঃ ৭-৮ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট জায়গায় ৪০০ – ৫০০ হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়।

হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং-এর উদ্দেশ্য

  • হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই সময়ে সঠিকভাবে পালন করা গেলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
  • সঠিক ব্রুডিং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • বিভিন্ন পীড়নের প্রভাব কম হয়।
  • বাচ্চার বৃদ্ধি সমহারে হয়।
  • বংশগত বৈশিষ্ট্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
  • টিকা কার্যকারীতা বেশি কার্যকরী হয়।

হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং-এর পূর্ব প্রস্তুতি

  • বাচ্চা তোলার এক সপ্তাহ পূর্বে নির্বাচিত ঘর জীবানুমুক্ত করতে হবে। ঘরের ভিতরের লিটারসহ অন্যান্য সকল পুরাতন মালামাল বাহিরে স্থানান্তর করতে হবে।
  • ঘরের পর্দা খুলে ফেলতে হবে। ঘরের ভিতর ও বাহিরের মাকড়শার জাল, ধূলা-ময়লা পরিস্কার করতে হবে।
  • ঘরের সকল সরঞ্জামাদি ডিটারজীন্ট দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • খামারের বাহিরে চারপাশে ৫ ফুট পর্যন্ত চুন ছিটাতে হবে।
  • পরিস্কার পানি দিয়ে খামারের মেঝে ভিজাতে হবে এবং ডিটারজেন্ট মিশানো পানি বা চুন ছিটিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে দিয়ে পরে ভালোভাবে ঘষে পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
  • তারপর জীবানুনাশক পানি দিয়ে মেঝে পুনরায় ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • তারপর খামারে আয়োডিন দ্রবন বা অন্য কোন এন্টিসেপ্টিক দ্রবন স্প্রে করতে হবে।
  • ঘর শুকিয়ে গেলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রবেশ করাতে হবে। প্রবেশ করানোর আগে সেগুলি ভালোভাবে ডিসইনফেকট্যান্ট বা এন্টিসেপটিক মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিস্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • এপর্যায়ে খামারের বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করে পরীক্ষা করতে হবে।
  • খামারে ব্রুডারগার্ড, হোভার স্থাপন করতে হবে।
  • বাচ্চা উঠানোর ৩-৪ ঘন্টা পূর্বে সকল সরঞ্জাম যেমন লিটার, পেপার, হোভার, চিকগার্ড, খাবার পাত্র, পানির পাত্র, হোবারের বৈদ্যুতিক বাল্ব নিরদিষ্ট স্থানে সংযোজন ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে।
  • বাচ্চা ঢুকানোর ৩ ঘন্টা পূর্বে হোভারের লাইট, চালু করতে হবে যাতে ব্রুডার গার্ডের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি পৌঁছায়।

বাচ্চা হাঁসের পালন ব্যবস্থাপনা

ব্রুডিং

  • বাচ্চা খামারী আসার ১ ঘন্টা আগে পানির পাত্রে পানি সরবরাহ করতে হবে। যাতে পানির তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাআকাছি পৌঁছাতে পারে। পানিতে ০.২৫% গ্লুকোজ (প্রতি লিটারে ২৫ গ্রাম) মিশিয়ে দিলে দুর্বল বাচ্চা দ্রুত সবল হয়ে উঠে।
  • বাচ্চার বাক্স খামারে প্রবেশের সময় বাক্সের উপর এন্টিসেপটিক স্প্রে করতে হয় এবং বাক্সের ওজন রেকর্ড করতে হয়, যাতে বাচ্চার ওজন নির্ণয় করা সহজ হয়। বাচ্চার ওজন সাধারণতঃ ৩৫-৪৫ গ্রাম হলে ভালো ।
  • বাচ্চাসহ বাক্স হোভারের নিচে ১০ নিনিট রেখে দিতে হয়।
  • বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার সময় ঠোঁট পাত্রে রাখা পানিতে স্পর্শ করাতে হয়। তাতে প্রতিটি বাচ্চা খাবার পানির পাত্র চিনতে পারে।
  • বাচ্চাকে প্রথম ২-৩ ঘন্টা খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কারণ, বাচচার পেটে থাকা ডিমের অবশিষ্ট ইয়ক থেকে সে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। এই প্রক্রিয়া বাচ্চার নাভী শুকাতে সহায়তা করে।
  • বাচ্চাকে প্রথম ১-২ দিন পেপারের উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হয়, তারপর থেকে খাবার পাত্র বা ট্রেতে দিতে হয়।
  • প্রথম সপ্তাহে প্রতি ১০০ বাচ্চার জন্য ১টি খাবার পাত্র ও ১টি পানির পাত্র এবং ২য় থেকে ৪র্থ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ৪০টি বাচ্চার জন্য ১টি খাবার পাত্র ও ৫০টি বাচ্চার জন্য ১টি পানির পাত্র দিতে হয়।
  • ৪ সপ্তাহের পর প্রতি ৩০টি বাচ্চার জন্য ১টি খাবার পাত্র ও ৪০টি বাচ্চার জন্য ১টি পানির পাত্র দিতে হয়।
  • সাধারণতঃ ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চা পানিতে ছাড়া উচিত নয়। পানিতে ছাড়ার উপযুক্ত হলে প্রথমেই সারাদিন পানিতে থাকতে দেয়া যাবে না। একটু একটু করে পানিতে থাকার অভ্যাস করাতে হয়।
ব্রুডিং ব্যবস্থাপনায় তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা

ব্রুডারের আদর্শ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দতা বয়স ভেদে পরিবর্তিত হয়। নিচের ছকে বিভিন্ন বয়সের জন্য ব্রুডিং তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দতা দেয়া হলো-

বয়সতাপমাত্রা (ডিগ্রি ফারেনহাইট)আপেক্ষিক আর্দতা (%)
১ম সপ্তাহ৯৫৫৫-৬০
২য় সপ্তাহ৯০৫৫-৬০
৩য় সপ্তাহ৮৫৫৫-৬০
৪র্থ সপ্তাহ৮০৫৫-৬০
৫ম সপ্তাহ৭৫৬০-৭০

 

সাধারণতঃ ব্রুডারের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বাচ্চা হোভারের নিচ থেকে সরে ব্রুডারগার্ডের কিনারের দিকে চলে যায় এবং তাপমাত্রা কমে গেলে বাচ্চা হোভারের নিচে গাদাগাদি করে জড়ো হয়। হৌভার উচু-নিচু করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

বাচ্চা হাঁসের আলোক ব্যবস্থাপনা

১ম সপ্তাহে লিটার হতে ৪-৫ ফুট উচুতে এবং ২য় সপ্তাহ হতে ৪-৫ ফুট উচুতে ১০০ ওয়াটের ৪টি বাল্ব ঝুলিয়ে দিতে হয়। ও্রথম থেকেই প্রতি রাতে আধা ঘন্টা – ১ঘন্টা আলো বন্ধ রেখে বাচ্চাকে অন্ধকারের সাথে পরিচিত করাতে হয়। তা নাহলে রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে বা কোন কারণে আলো নিভে গেলে বাচ্চা ভয়ে এক জায়গায় জড়ো হয় য়াকে পাইলিং বলে। তখন চাপাচাপিতে বাচ্চা মারা যেতে পারে।

ব্রুডার ঘরে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা

ব্রুডার ঘরে বায়ু চলাচল অত্যন্ত জরুরী। ব্রুডার ঘরের দূষিত বায়ু নিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহের সুব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাপের উৎস হতে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস জমা হয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাছাড়া ঘরে সৃষ্ট এ্যামোনিয়া গ্যাস ঘরে তীব্র ঝাঝালো গন্ধ সৃষ্তি করতে পারে। এজন্য মাঝে মাঝে পর্দা তুলে দিয়ে গ্যাস নির্গমন ও বিশুদ্ধ বায়ু প্রবেশ নিশ্চিত করতে হয়।

হাঁসের বাচ্চার খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ডিম হতে সদ্য ফোটা বাচ্চার পেটে ইয়কের কিচহু অংশ থেকে যায় যা প্রথম ২-৩ দিন কোন খাদ্য ছাড়াই বাচ্চা হাঁসকে বেচে থাকতে সাহায্য করে। তবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে দেরি ককরলে এদের পরবর্তীতে দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে। একারণে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর দ্রুত খামারে স্থানান্তর করতে হয়। প্রথমে পানি এবং পরবর্তীতে খাদ্য দিতে হয়।

  • প্রথমদিন পানিতে গ্লুকোজ দিতে হয়।
  • প্রথম ১-২ দিন পানিতে ভিটামিন বি ও স্যালাইন দিতে হয়।
  • ব্রুডারে ছাড়ার পর প্রথম ২ দিন ভূট্টা ভাঙা (ছোট আকারের) পেপারের উপর ছিটিয়ে সরবরাহ করতে হয়।
  • ৩য় দিন হতে খাদ্য পাত্রে সরবরাহ করতে হয়।
  • প্রতিটি বাচ্চার জন্য ১ম সপ্তাহে গড়ে ১৫ গ্রাম, ২য় সপ্তাহে ৪০ গ্রাম, ৩য় সপ্তাহে ৭৫ গ্রাম, ৪র্থ সপ্তাহে ৯৫ গ্রাম, ৫ম সপ্তাহে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার দিতে হয়।

হাঁসের বাচ্চারপানি ব্যবস্থাপনা

  • খামারে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ থাকতে হবে।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বার পরিমানমত পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • পানি বিশুদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে পানিতে ৩ পিপিএম মাত্রায় ক্লোরিন প্রয়োগ করা যায়।

বাড়ন্ত হাঁস পালন ব্যবস্থাপনা

সাধারণতঃ ৭-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালকে বাড়ন্তকাল বা গ্রোয়িং স্টেজ বলে। তবে ৮ সপ্তাহ হতে শুরু করে ডিম উৎপাদন আরম্ভ পর্যন্ত হাঁসের বাড়ন্তকাল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এসময়ের ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে খামারের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা। বাচ্চার শারীরিক গঠন ১২ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। সুতরাং এই সময়ের পরিচর্যার উপর নির্ভর করে ডিম পাড়ার হার।

বাড়ন্ত হাঁসের আলোক ব্যবস্থাপনা

  • বাড়ন্তকালে কৃত্রিম আলো প্রদানের প্রয়োজন হয় না। সাধারণতঃ ৬ সপ্তাহ বয়স থেকে কৃত্রিম আলো প্রদান সম্পুর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়।
  • বাড়ন্তকালে দিনের আলো ব্যতীত অপরিকল্পিতভাবে রাতে ঘরে আলো প্রদান করলে হাঁসের আগাম যৌন পরিপক্কতা আসে এবং ডিম পাড়া শুরু করে। যা পরবর্তীতে ডিম পাড়ার হারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বাড়ন্ত হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

  • ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৩ বার টাটকা খাবার সরবরাহ করতে হয়।
  • দৈহিক ওজনের সাথে সমন্বয় করে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।

ডিম পাড়া হাঁস পালন ব্যবস্থাপনা

ডিম পাড়া হাঁস বাছাই

ডিম পাড়া হাঁস বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিম পাড়া হাঁস বাছাইয়ে যে সকল বিষয় বিবেচ্য তা হলো-

  • বাছাইকৃত সকল হাঁসের ওজন প্রায় সমান হতে হবে।
  • সতেজ ও সবল হতে হবে।
  • পালক উজ্জ্বল, চকচকে, নরম ও মসৃন হতে হবে।
  • চোখ বড়, উজ্জ্বল ও সতেজ হতে হবে।
  • চামড়া পাতলা, নরম ও চর্বিবিহীন হতে হবে।
  • মলদ্বার বড়, পুরু ও ভেজা হতে হবে।

ডিম পাড়া হাঁসের আলোক ব্যবস্থাপনা

ডিম পাড়া হাঁসের জন্য আলোক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলোক ব্যবস্থাপনার সাথে খামারের হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মৃত্যুঝুঁকি, যৌন পরিপক্কতা, দৈহিক গঠন, ডিম উৎপাদন ইত্যাদি নির্ভরশীল। হাঁসের খামারের আলোক তালিকা ছকে দেয়া হলো-

বয়স (সপ্তাহ)আলোক সময়কাল (ঘন্টা)

(প্রাকৃতিক + কৃত্রিম)

আলোর প্রখরতা (লাক্স)
১-২২৪২০-৩০
২৩২০-৩০
২২২০-৩০
২১১০-২০
২০
১৯
১৮
৯-১৯১২২০-৩০
২০১৩
২১১৩.৫
২২১৪
২৩১৪.৫
২৪১৫
২৫- ডিম পাড়া শেষ পর্যন্ত১৬

হাঁসের ডিম পাড়ার বাসা

  • মেঝে বা মাচায় হাঁস পালন করলেও ঘরে সাধারণতঃ ডিম পাড়ার বাসা ডিতে হয় না। সাধারণতঃ হাঁস লিটারর উপর ডিম পাড়ে।
  • হাঁস সাধারণতঃ রাতে এবং সকাল ৯ টার মধ্যে ডিম পাড়ে।
  • তবে লিটার বা মাচার উপর দু’একটি ডিম পাড়ার বাক্ষ দিলে ভালো হয়।
  • প্রতিদিন একই ব্যক্তির একই সময়ে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। কোন অপরিচিত লোক খামারে প্রবেশ করলে ডিম উৎপাদন কমে যায়।