বাণিজ্য বাধা (Trade barriers)

বাণিজ্য বাধা হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবাধ বাণিজ্য সীমিত করার জন্য সরকার সরকার কর্তৃক আরোপিত  বিধিনিষেধ।

অন্যভাবে বলা যায়, বাণিজ্য বাধা মূলত আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত বাজারগুলিতে হস্তক্ষেপ। আবার অন্য কথায়, বাণিজ্য বাধা হল আন্তর্জাতিক পণ্য বা পরিষেবার প্রবাহের উপর সরকার কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এই বাধাগুলি কখনও কখনও সুস্পষ্ট হয়, তবে প্রায়শই সূক্ষ্ম এবং অ-স্পষ্ট হয়।

মুক্ত অর্থনীতির প্রবক্তাদের মতে বাণিজ্য বাধা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক দক্ষতা হ্রাস করে। অন্যদিকে বানিজ্য বাধার পক্ষের অর্থনীতিবিদরা বলেন এটি বিতরণমূলক ন্যায়বিচার, দেশীয় শিল্প ও চাকুরি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

 

বাণিজ্য বাধা কিভাবে কাজ করে?

বেশিরভাগ বাণিজ্য বাধা একই নীতিতে কাজ করে: বাণিজ্যে কিছু ধরণের খরচ (অর্থ, সময়, আমলাতন্ত্র, কোটা) আরোপ করা যা ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য বা প্রাপ্যতা বাড়ায়। শুল্ক বাধা আমদানিতে আর্থিক বোঝা চাপায় এবং বাণিজ্যে অশুল্ক বাধা  আমদানি এবং মাঝে মাঝে রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার জন্য অন্যান্য প্রকাশ্য এবং গোপন উপায় ব্যবহার করে।

যে দেশগুলি মুক্ত বাণিজ্যের প্রচার করে তারাও কিছু বিশেষ শিল্প যেমন কৃষি এবং ইস্পাতকে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দেয়।

সবচেয়ে সাধারণ বাণিজ্য বাধা কৃষি পণ্যের উপর। টেক্সটাইল, পোশাক এবং পাদুকা হল উৎপাদিত পণ্য যা সাধারণত বাণিজ্য বাধা দ্বারা সুরক্ষিত।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় গত বিশ বছরে শুল্ক হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্রগুলি তাদের অশুল্ক বাধার ব্যবহার বাড়িয়েছে।

আধুনিক বাণিজ্য চুক্তি দীর্ঘ এবং জটিল; কারণ তারা প্রায়শই শুল্ক ছাড়াও বিভিন্ন মান ও প্রবিধানের মতো বাণিজ্যে অ-শুল্ক বাধা মোকাবেলা করে।

জাতীয় সংস্থাগুলি প্রায়শই বিদেশী প্রতিযোগি সংস্থাগুলিকে দূরে রাখার জন্য ডিজাইন করা নিয়মগুলি প্রণয়ন করার জন্য তাদের নিজস্ব সরকারগুলির উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং আধুনিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি এই ধরনের প্রবিধান দূর করার উপায়।

বাণিজ্য বাধা কত প্রকার ও কি কি?

বাণিজ্য বাধার  প্রথমত ২ প্রকার-

বাণিজ্য বাধা

বাণিজ্য বাধা

  1. শুল্ক বাধা বা ট্যারিফ (Tariffs) ও
  2. বাণিজ্যে অ-শুল্ক বাধা (Non-tariff barriers to trade)।

নিন্মলিখিত বাধাগুলি অ-শুল্ক বাধার অন্তর্ভুক্ত

বাণিজ্য বাধা

বাণিজ্যে অ-শুল্ক বাধাসমুহ

  1. আমদানি লাইসেন্স (Import licenses)
  2. রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ/লাইসেন্স (Export control/ licenses)
  3. আমদানি কোটা (Import quotas)
  4. ভর্তুকি (Subsidies)
  5. স্বেচ্ছায় রপ্তানি সীমাবদ্ধতা (Voluntary Export Restraints)
  6. স্থানীয় সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা (Local content requirements)
  7. নিষেধাজ্ঞা (Embargo)
  8. মুদ্রার অবমূল্যায়ন (Currency devaluation)
  9. বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা (Trade restriction)

 

শুল্ক বা ট্যারিফ (Tariffs)

বাণিজ্যের সবচেয়ে সাধারণ বাধা হল শুল্ক – আমদানির উপর কর৷ শুল্ক দেশীয় পণ্যের তুলনায় আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে আমদানি হ্রাস করে।TARIFF শব্দটি ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অভিযোজিত হয়েছে। আর এটি ফরাসিতে এসেছে স্প্যানিশ ট্যারিফার (ta`rifa) মাধ্যমে। Ta`rifa হল দামের একটি তালিকা বা টেবিল যার উপর আমদানি বা রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়। শুল্ক আবার দুই প্রকার – আমদানি শুল্ক ও রপ্তানি শুল্ক।  

 

আমদানি লাইসেন্স (Import licenses)

আমদানিকারকদের লাইসেন্স থাকা বা বিদেশি পণ্য বিক্রির জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকার দেশীয় বাজারে বিদেশি পণ্যের প্রবেশ সীমিত করতে পারে। কিছু দেশ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কাগজপত্রকে মোটামুটি সহজবোধ্য করলেও অন্যরা এটিকে একটি বাস্তব অগ্নিপরীক্ষা করে তোলে, যার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয় এবং তা সম্পন্ন করতে আইনজীবীদেরকে মোটা ফি দেয়া লাগে৷

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ/লাইসেন্স (Export control / licenses)

কিছু রপ্তানিকারকদের দেশের বাইরে তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে যদি এটির চাহিদা বেশি হয়, যেমন রত্ন। আবার বিদেশে রপ্তানি পণ্যের মান নিযন্ত্রণের মাধ্যমে সুনাম রক্ষা করে বিদেশি বাজার ধরে রাখার জন্যও রপ্তানি লাইসেন্স প্রয়োগ করা হয়।

 

আমদানি কোটা (Import quotas)

আমদানিকারকদের অবশ্যই কোটা মেনে চলতে হয়। কোটা হল পণ্যের পরিমাণের একটি সীমা যা একজন আমদানিকারক একটি দেশে আনতে পারে। সরবরাহ গ্রাফ মডেলগুলি থেকে দেখা যায় যে, সরবরাহ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতি ইউনিটের দাম হ্রাস পায়। এটি দেশীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতি করতে পারে।  তাই কোটার মাধ্যমে সিস্টেমে মোট শক সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়।

ভর্তুকি (Subsidies)

বাণিজ্যের আরেকটি সাধারণ বাধা হল দেশীয় কোন নির্দিষ্ট শিল্পে সরকারি ভর্তুকি (subsidy)। ভর্তুকি বিদেশী বাজারের তুলনায় দেশীয় পণ্যেকে সস্তা করে তোলে এবং ওই পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করে। ফলে আমদানি হ্রাস পায়। তাই, দেশগুলিতে প্রায়শই ভর্তুকি বা বাজেটে অর্থের পরিমাণ থাকে যা সরাসরি দেশীয় উৎপাদকদের বিদেশী আমদানির সাথে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলে। যেমন, আমেরিকান গাড়ি নির্মাতারা উল্লেখযোগ্য ভর্তুকি পায়। এমনকি আমেরিকান কৃষকরাও তাদের শস্যকে আমদানি করা খাবারের সাথে আরও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য প্রচুর অর্থ ভর্তুকি পায়। তবে তারা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ভর্তুকি প্রদান না করার জন্য উপদেশ দেয় এবং তাদের প্রভাবাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় ঋণের মধ্য ভর্তুকি প্রদান না করার শর্ত সন্নিবেশন করে, যাতে উন্নত দেশগুলি তাদের পণ্য বিনা বাধায় রপ্তানি করতে পারে।

স্বেচ্ছায় রপ্তানি সীমাবদ্ধতা (Voluntary Export Restraints)

স্বেচ্ছায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা (VER) হল একটি রপ্তানিকারক দেশ  কর্তৃক একটি পণ্যের রপ্তানির পরিমাণের উপর একটি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। এটি রপ্তানিকারক দেশ দ্বারা স্ব-আরোপিত হয়।

১৯৩০-এর দশকে জাপান যুক্তরাষ্ট্রে অটমোবাইলস রপ্তানি সীমিত করার জন্য এটি প্রথম ব্যবহার করেছিল। তখন থেকে VER ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।  এবং ১৯৯৪ সালে উরুগুয়ে রাউন্ডে শুল্ক ও বাণিজ্যের উপর সাধারণ চুক্তি ( General Agreement on Tariffs and Trade – GATT) আপডেট করার পর, WTO সদস্যরা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো নতুন VERs বাস্তবায়ন না করতে এবং এক বছরের মধ্যে বিদ্যমানগুলিকে পর্যায়ক্রমে বাতিল করতে সম্মত হয়।

রপ্তানিকারক দেশের কোম্পানি VER এড়াতে তাদের পণ্য আমদানিকারক দেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে পারে। এতে কোম্পানির আর পণ্য রপ্তানি করতে হবে না, এবং দেশের VER দ্বারা বাধাগ্রস্থ হতে হবে না।

স্থানীয় সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা (Local content requirements)  

বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে এমন ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান হল স্থানীয় সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা(LCRs)। এটি সরকার দ্বারা আরোপিত একটি নীতি যা ফার্মগুলিকে একটি অর্থনীতিতে কাজ করার জন্য দেশীয়ভাবে তৈরি পণ্য বা অভ্যন্তরীণভাবে সরবরাহ করা পরিষেবাগুলি ব্যবহার করতে বাধ্য করে৷

গত কয়েক দশক ধরে, বহুজাতিক কোম্পানীর সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (FDI) এর ক্ষেত্রে FDI থেকে প্রবাহিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপে স্থানীয় জনগণ এবং স্থানীয় সম্পদ, পণ্য ও পরিষেবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়।

 

 নিষেধাজ্ঞা (Embargo)

বাণিজ্যে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ বাধা হল নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ বা রাজনৈতিক চুক্তি যা একটি বিদেশী দেশের রপ্তানি বা আমদানি করার ক্ষমতাকে সীমিত করে। যুদ্ধ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বৈরিতা প্রসূত নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও দেশে উৎপাদিত হয় এমন পণ্যের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে।

সাম্প্রতিক কালে রাশিয়ান পণ্য ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উপর আমেরিকাসহ ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান জোটভুক্ত বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

 

মুদ্রার অবমূল্যায়ন (Currency devaluation)

মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে দেশীয় বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের মুল্য বৃদ্ধি পায়। কারণ আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায় কিন্তু সেই পণ্য দেশীয় বাজারে বিক্রয় করতে হয় দেশীয় মুদ্রায়। পক্ষান্তরে, রপ্তানিলব্ধ বৈদেশিক মুদ্রা ভাঙ্গিয়ে বেশি দেশি মুদ্রা পাওয়া যায় বলে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় আমদানি অপেক্ষা রপ্তানি বানিজ্যে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়। ফলে আমদানি হ্রাস পায়।  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে মুদ্রার অবমুল্যায়ন করে বিশেষ করে বিলাশ দ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং রপ্তানি উৎসাহিত করতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়।

 

বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা (Trade restriction)  

বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা হল দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে পণ্য এবং/অথবা পরিষেবার বাণিজ্যের উপর একটি কৃত্রিম নিষেধাজ্ঞা। এটি সুরক্ষাবাদের উপজাত। যাইহোক, শব্দটি বিতর্কিত কারণ একটি অংশ এটাকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হিসাবে দেখে কিন্তু অন্যরা এটাকে  ক্ষতিকারক বা বিপজ্জনক পণ্য থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করার উপায় হিসাবে দেখে।

উদাহরণ

জার্মান বিশুদ্ধতা আইন: জার্মানির বিশুদ্ধতা আইন মেনে অনেক বিদেশী বিয়ারকে জার্মানিতে “বিয়ার” হিসাবে বিক্রি করা যায়নি। এই আইনটি ১৯৮৭ সালে ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস দ্বারা প্রত্যাহার করা হয়, তবে এখনও অনেক জার্মান ব্রিউয়ারি স্বেচ্ছায় এটি অনুসরণ করে চলছে।

 

মার্কিন মোটর গাড়ির হেডল্যাম্প: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোটর গাড়ির গোলাকার বাতি প্রচলিত ছিল। ১৯৭৯ সাল নাগাদ বেশিরভাগ নতুন গাড়িতে আয়তক্ষেত্রাকার হেডল্যাম্প চালু হয়। আবার, এখন ইউএস শুধুমাত্র দুটি প্রমিত আকারের আয়তক্ষেত্রাকার সিল-বিম বাতির অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন বাজারে ঢুকতে হলে উৎপাদনকারীকে ওই দুটি মাত্র স্টান্ডার্ডের বাতি সম্বলিত গাড়ি সরবরাহ করতে হবে। ইউরোপিয়া ও এশিয়ার অনেক মডেলের গাড়ি তাই মার্কিন বাজারে ঢুকতে পারে না।

 

এককভাবে নাকি একসাথে একাধিক বানিজ্য বাধা কাজ করে?

একটি উদাহরণের মাধ্যমে প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বান্যিজ্য বাধার বিপরীতে মুক্ত বাণিজ্যের নেতৃত্বদানকারী দেশ। কিন্তু তারা তাদের অটোমোবাইল শিল্পকে রক্ষা করতে প্রাণান্ত কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি আমদানিকারককে সর্বপ্রথম অবশ্যই একটি আমদানি লাইসেন্স পেতে হবে, সেইসাথে কোটা আরোপিত হবে, আমদানি করা গাড়ি প্রতি বাধ্যতামুলক শুল্ক বা কর দিতে হবে যাতে গাড়ি প্রতি দাম অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলির সাথে তুলনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়। আর Trade restriction তো থাকছেই। এবং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য রয়েছে ভর্তুকি সুবিধা।

 

ব্যবসায় বাণিজ্য বাধার প্রভাব (Impacts of trade barriers on business)

উন্নয়নশীল বিশ্বে বাণিজ্য বাধাগুলি প্রায়ই সমালোচিত হয়। কারণ ধনী দেশগুলো বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করতে এবং তা উন্নয়নশীল দেশসমুহের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম।

উন্নয়নশীল দেশগুলো ফসল উৎপাদনে সবচেয়ে ভালো, তবুও তাদের উচ্চ বাধার সম্মুখীন হতে হয়। উন্নত অর্থনীতিতে খাদ্য আমদানিতে শুল্ক বা কৃষকদের জন্য উচ্চ হারে ভর্তুকি দেওয়ার মতো বাণিজ্য বাধা বিশ্ব বাজারে অতিরিক্ত উৎপাদন এবং ডাম্পিংয়ের দিকে পরিচালিত করে। এইভাবে বিশ্বব্যাপী দাম কমিয়ে উন্নয়নশীল অর্থনীতির কৃষকদের অসুবিধায় ফেলে; কারণ গরীবদেশগুলি সাধারণত এই ধরনের ভর্তুকি থেকে উপকৃত হয় না।

ধনী দেশের বাণিজ্য নীতিগুলি প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল বিশ্বের উপর প্রভাব ফেলে।

বাণিজ্য বাধাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশে কঠিন সামঞ্জস্য ও প্রি-শিপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা (conformity and per-shipment requirements)  এবং নিজ দেশে দুর্বল পরিদর্শন বা শংসাপত্র (weak inspection or certification procedures) পদ্ধতির সংমিশ্রণ ।

কোম্পানি এবং দেশগুলিতে বাণিজ্য বাধাগুলির প্রভাব অত্যন্ত অসম। একটি বিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোট সংস্থাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় (50% এর বেশি)।

বাণিজ্য বাধাগুলির আরেকটি নেতিবাচক দিক হল পণ্যের সীমিত পছন্দের ফলে গ্রাহকদের উচ্চ মূল্য দিয়ে নিম্নমান গ্রহণ করতে বাধ্য করা।

বাণিজ্য বাধা মুক্ত বাণিজ্যে বাধা দেয়।

তুলনামূলক সুবিধার তত্ত্ব (The theory of comparative advantage) বলে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশগুলি বিভিন্ন অনুপাতে (অর্থাৎ ভিন্ন আপেক্ষিক খরচে) সম্পদের অ্যাক্সেস পাবে ততক্ষণ তারা একে অপরের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জড়িত থেকে লাভবান হবে। বাণিজ্য থেকে এই লাভগুলি পাওয়ার জন্য, তাদের প্রত্যেককে কেবল সেই শিল্পগুলিতে সম্পদ উৎসর্গ (devote) করতে হবে যেখানে দেশীয় উৎপাদন সবচেয়ে দক্ষ এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার জন্য অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন এতে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি একটি ভাল জিনিস এবং বাণিজ্য বাধাগুলি এড়ানো উচিত।  তবুও, বাণিজ্য বাধা বিশ্বজুড়ে সাধারণ হয়ে উঠছে কারণ অনেক সরকার তাদের অর্থনীতিতে সুরক্ষাবাদী অবস্থান নেয়।

যদিও সামগ্রিকভাবে দেশগুলি মুক্ত বাণিজ্য থেকে লাভের প্রবণতা দেখায়, যেহেতু আরও বেশি দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করে, উৎপাদনে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়, যা দেশের মধ্যে কিছু গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। বিশেষ শিল্পে মজুরি এবং চাকরি চাপে পড়তে পারে।

তাত্ত্বিকভাবে, দেশীয় একটি কম দক্ষ শিল্পের এই ক্ষতি পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং অর্থনীতির আরও উত্পাদনশীল খাতে লোক এবং চাকরি পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে উপশম করা যেতে পারে। তবে পুনরায় প্রশিক্ষণের জন্য সময় লাগে। তাই অনেক নাগরিক এবং রাজনীতিবিদরা দ্রুত সমাধান হিসাবে বাণিজ্য বাধাকে বেছে নেন। সময়ের সাথে সাথে, এর ফলে দেশগুলি ভর্তুকি এবং শুল্ক সহ অদক্ষ দেশীয় শিল্পগুলিকে সমর্থন করে, যা অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়।

২০১৮ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ  শুরু হয় এবং আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করে।

বৃটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের সিদ্ধান্ত জনগণের অবাধ চলাচলের প্রতিবন্ধকতা উৎপাদনের একটি উপাদান শ্রমের উপর বাণিজ্যের জন্য একটি অ-শুল্ক বাধা তৈরি করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিনিময় পণ্য এবং পরিষেবার উপর কোন শুল্ক নেই। তা সত্ত্বেও, ট্যাক্সের জাতীয় হারের তারতম্য, উৎপাদনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত মান, সেইসাথে স্থানীয় সংস্থাগুলির পক্ষে জাতীয় সরকারগুলির পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে বাণিজ্যে অ-শুল্ক বাধাগুলি অব্যাহত থাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নও কঠোর খাদ্য ও ওষুধের নিরাপত্তা মান বজায় রাখার নামে এই খাতে ইইউ বহির্ভূত পণ্য আমদানির লাইসেন্স আরোপ করে।

যদি দুই বা ততোধিক দেশ বারবার একে অপরের বিরুদ্ধে বাণিজ্য বাধা ব্যবহার করে তাহলে তা একটি বাণিজ্য যুদ্ধের রূপ নেয়।