ছাগলের রোগ প্রতিরোধ

ছাগলের বাচ্চাকে টিকা প্রদান

ছাগলের  রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা 

রোগ নিরাময়ের চেয়ে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ উত্তম। ছাগলের রোগ প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক টিকা। কোন সুস্থ্য প্রাণিকে রোগ হওয়ার পূর্বেই একটি নির্দিষ্ট রোগের টিকা প্রদানের মাধ্যমে উক্ত রোগ হতে মুক্ত রাখার পদ্ধতিকে ভ্যাক্সিনেশন বলে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গড়ে ওঠে। ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কখনও কয়েক মাসের জন্য গড়ে ওঠে, আবার কখনও কয়েক বছর হতে আজীবন কাল হতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য ছাগলের তুলনায় অনেক বেশি।

ভ্যাক্সিনেশনের সাধারণ নিয়ামাবলী

  • সুস্থ্য প্রাণিকে ভ্যাক্সিন প্রদান করতে হবে। অসুস্থ্য ছাগলকে ভ্যাক্সিন প্রদান করলে  ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে না এবং তা করা নিরাপদও নয়।
  • পরজীবি আক্রান্ত প্রাণিকে ভ্যাক্সিন ভাল কাজ করে না। তাই ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পূর্বে পরজীবি মুক্ত করে নিলে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন ভাল কোম্পানী হতে ভ্যাক্সিন সংগ্রহ করে মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ার পূর্বে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাক্সিন কোন কাজে আসে না বরং তা ক্ষতিকর।
  • ভ্যাক্সিন গুলানোর জন্য ডিস্টিল্ড ওয়াটার বা পাতিত পানি ব্যবহার করতে হবে। পুকুর, নদী নালা, ট্যাপ ও নলকুপের পানি ব্যবহার করলে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • পানিতে গোলানো ভ্যাক্সিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে (গোলানোর সর্বোচ্চ ১ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে)।
  • ভ্যাক্সিন নির্দেশনানুযায়ী যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ভ্যাক্সিন পরিবহনের সময় থার্মোফ্লাস্কে পরিবহন করতে হবে।
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।

ভ্যাক্সিন প্রয়োগ পদ্ধতি

বিভিন্ন ধরণের ভ্যাক্সিন প্রস্তুত কারকের নির্দেশনা অনুযায়ী শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত যে সকল পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হয় সেগুলি নিম্ন রূপ-

  • মাংস পেশীতে ইনজেকশন
  • চামড়ার নিচে ইনজেকশন
  • শিরায় ইনজেকশন
  • খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে
  • স্প্রে বা এ্যারোসলের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে
  • চোখে ড্রপ এবং
  • মুখে খাওয়ানো।
ছাগলের রোগ প্রতিরোধ

ছাগলের গলার চামড়ান নীচে টিকা প্রদান

ভ্যাক্সিনের কার্যকারীতা নষ্ট হওয়া বা কমে যাওয়ার কারণ

  • ভ্যাক্সিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে
  • অসুস্থ প্রাণিকে ভ্যাক্সিন প্রদান করলে
  • প্রোটিন ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছে এমন প্রাণিতে ভ্যাকসিন করলে
  • রক্ত শূন্যতায় ভুগছে এমন প্রাণিতে ভ্যাকসিন করলে
  • কৃমি আক্রান্ত পশুতে ভ্যাক্সিন করলে
  • ভ্যাকসিন গুলানোর জন্য ডিস্টিল্ড ওয়াটারের পরিবর্তে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করলে
  • ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও জীবানুমু্ক্ত না হলে
  • প্রস্তুত কারকের নির্ধেশিত মাত্রায় ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা না হলে।

ভ্যাক্সিন প্রয়োগে সতর্কতা

  • মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা যাবে না
  • অসুস্থ প্রাণিকে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা যাবে না
  • প্রয়োগোর পূর্বে প্রস্তুত কারকের নির্দেশনা ভালভাবে পড়ে নিতে হবে
  • প্রস্তুত কারকের নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত মাত্রায় নির্ধেশিত স্থানে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে
  • দুটি ভ্যাক্সিন প্রয়োগগের মধ্যবর্তী বিরতিকাল কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া বাঞ্ছনীয়
  • গর্ভবতী ছাগীকে জিটিভি দেয়া যাবে না।

ছাগলের রোগ প্রতিরোধে কতিপয় আবশ্যকীয় টিকার বিবরণ

টিকার নাম

টিকা প্রয়োগের বয়সপরবর্তী টিকা প্রয়োগের সময়টিকা প্রয়োগের স্থানটিকা প্রয়োগের মাত্রা বা পরিমান
পিপিআর টিকা৪ মাস১ বছর পর পরচামড়ার নিচে

১ মিলি

ক্ষুরা রোগের টিকা

৩ মাস৬ মাস পর পরচামড়ার নিচেমনো – ১ মিলি

বাই – ২ মিলি

ট্রাই – ৩ মিলি

গোট পক্স টিকা৪ মাস৬ মাস পর পরচামড়ার নিচে

১ মিলি

জলাতংক টিকা

৪ মাস ( বাচ্চার মাকে টিকা দেয়া না থাকলে)

৯ মাস ( বাচ্চার মাকে টিকা দেয়া থাকলে)

 

১ বছর পর পরচামড়ার নিচে

বা মাংস পেশীতে

১ মিলি
তড়কা বা এ্যানথ্রাক্স রোগের টিকা৪ মাস১ বছর পর পরচামড়ার নিচে

০,৫ মিলি

গলা ফুলা রোগের টিকা

৬ মাস১ বছর পর পরচামড়ার নিচে২ মিলি
টিটেনাস টিকা (টিটেনাস টক্সয়েড)প্রসবের পূর্বে ছাগীকে এবং প্রসবের পর বাচ্চাকেমাংস পেশীতে

১ মিলি

কন্টাজিয়াস একথাইমা টিকা

১-৩ দিন (১ম ডোজ)১০-১৪ দিন (২য় ডোজ),

৩ মাস (৩য় ডোজ),

১২ মাস পরবর্তী ডোজ

মাংস পেশীতে

উৎপাদনকারীর নির্দেশনা মত

 

ছাগলের খামারের জীব-নিরাপত্তা

  • খামার এলাকার বেরা বা নিরাপত্তা বেষ্টনী এমনভাবে নির্মান করতে হবে যাতে খামারে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি, শেয়াল, কুকুর বা অন্য কোন বন্য প্রাণি প্রবেশ করতে না পারে।
  • প্রবেশ পথে ফুট বাথ বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবানু নাশক মেশানো পানি রাখতে হবে।
  • খামারে প্রবেশ করার আগে প্রবেশকারী তার জুতা বা পা ডুবিয়ে জীবানু মুক্ত করবেন।
  • খামারের জন্য সংগৃহীত নতুন ছাগল সরাসরি খামারে পূর্বে বিদ্যমান ছাগলের সাথে রাখা যাবে না। নতুন আনীত ছাগলকে স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরণের ঘরকে  কোয়ারেন্টাইন সেড বলা হয়। নতুন আনীত ছাগলকে অন্ততঃ ২ সপ্তাহ এই সেডে  রাখা বিশেষ জরুরী।
  • কোয়ারেন্টাইন সেডে এসময়ে এসব ছাগলের কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে কৃমি নাশক প্রয়োগ করতে হবে। বহিঃপরজীবি ও অন্তঃপরজীবির জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করা ভাল। চর্ম রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে (০,৫%) শূন্য দশমিক পাঁচ পারসেন্ট ম্যালাথিয়ন দ্রবনে গোসল করাতে হবে।
  • কোয়ারেন্টাইন সেডে ছাগল রাখার ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোন রোগ না দেখা দেয় তাহলে প্রথমে পিপিআর রোগের টিকা এবং ৭ দিন পর গোট পক্সের টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
  • শেষ টিকা প্রদানের ৭ দিন পর কোয়ারেন্টাইন সেড থেকে এসব ছাগলকে মূল খামারে নেয়া যাবে।
  • প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে ছাগলের ঘর, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।
  • কোন ছাগল যদি অসুস্থ হয় তাহলে তালে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্য়বস্থা করতে হবে।
  • খামারে ছাগল মারা গেলে অবশ্যই মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর তদনুযায়ী অন্যান্য জীবিত ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • মৃত ছাগলকে খামার খেক দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুতে ফেলতে হবে।
  • রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সকল সরঞ্জাম ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
  • সুস্থ ছাগলের সেড, কোয়ারে্টাইন সেড ও আইসোলেশন সেডে আলাদা আলাদা পরিচর্যাকারী ছাগলের পরিচর্যা করবেন। তা সম্ভব না হলে প্রথমে সুস্থ ছাগলের পরিচর্যা করে ক্রমান্বয়ে কোয়ারেন্টাইন সেড ও আইসোলেশন সেডে গমন করতে হবে। কোনভাবেই এর উল্টা ক্রম অনুসরণ করা যাবে না।