চাহিদা কাকে বলে? (What is Demand)

সাধারণ ভাষায় কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা বা ইচ্ছাকে চাহিদা বা demand বলে। কিন্তু অর্থনীতির ভাষায় শুধু মাত্র কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খাকে demand হিসেবে গণ্য করা হয় না।

মানুষের যা না থাকে সে তা চায়। কিন্তু চাইলেই demand হয় না। একজন লোক মোটর সাইকেল কিনতে চায়। কিন্তু তার মোটর সাইকেল কেনার মত টাকা নাই। তাহলে এই চাওয়া demand হল না।

আবার একজনের টাকা আছে, কিন্তু মোটর সাইকেল কেনার আকাঙ্খা নাই। তাহলে তারও মোটর সাইকেলের demand নাই ধরতে হবে।

আরেক জনের  মোটর সাইকেলে চড়ার আকাঙ্খা আছে, কেনার মত টাকাও আছে। কিন্তু সে কৃপণ, তাই মটর সাইকেল কেনার জন্য টাকা খরচ করতে চায় না। তাহলে অর্থনীতির ভাষায় তারও মোটর সাইকেলের demand নাই।

অর্থনীতিতে চাহিদার গুরুত্ব কি? demand কোন কাজে লাগে? খায়, না মাথায় দেয়? না কি ভালো ছাত্ররা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য মুখস্ত করে?  চালাক পন্ডিতেরা বদ ছাত্রগুলারে সায়েস্তা করার জন্য  demand, যোগান এইসব জটিল বিষয় অর্থনীতিতে  ঢুকাইছে?

আসলে চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাজারে পণ্যের সরবরাহ নির্ভর করে। demand বাড়লে উৎপাদক উৎপাদন বড়ায়। উপরে যে তিন জনের উদাহরণ দেয়া হয়েছে তাদের জন্য উৎপদাক মোটর সাইকেল বানাবে না। কারণ ওগুলি বিক্রি হবে না। কেননা, তাদের মোটর সাইকেলের অভাব আছে, কিন্তু demand নাই। তাই demand কি সেটি জানা দরকার।

এভাবে চাহিদার সংজ্ঞায় দেয়া যায়, উপযুক্ত ক্রয় ক্ষমতা ও অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা সম্বলিত মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে demand বলে ।

অর্থনীতির ভাষায় কোনো আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছাকে demand বলতে হলে নিম্নোক্ত শর্ত পালন করতে হয় । যথা—

ক. কোনো দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খা (Willingness)

খ. আকাঙ্খা পূরণের সামর্থ্য বা ক্রয়ক্ষমতা (Ability or Purchasing Power)

গ. ক্রয় করার জন্য অর্থ ব্যয়ের ইচ্ছা (Willingness to Spend Money)।

আসলে উপরের সংজ্ঞাটি ধারণাগত। এটি দিয়ে demand সম্পর্কে একটি একাডেমিক ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু তা বাস্তবে কাজে আসে না।

ধরি, ১০ জন মানুষের মোটর সাইকেলের আকাঙ্খা আছে, সামর্থ্য় আছে এবং অর্থ খরচের ইচ্ছাও আছে; অর্থাৎ ১০ জনের মোটর চাইকেলের demand আছে। সেই  মোতাবেক আমি বিক্রির জন্য ১০টি মোটর সাইকেল বানালাম। সব বিক্রি হবে?

কিভাবে? আমি যে দামে বিক্রি করতে চাই তাদের ভিরতে সবাই সে দাম দিতে চাচ্ছে না। কয়েকটি বিক্রি হল, কয়েকটি হল না।

তাই, বাস্তব ক্ষেত্রে বা ব্যবসায় বানিজ্যে প্রয়োগ করতে হলে চাহিদার একটি প্রয়োগিক বা পরিমানগত বা গানিতিক সংজ্ঞার প্রয়োজন পড়ে।  অর্থনীতিবিদ বেনহাম (Benham) তেমন একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে সেটি দেয়া হল-

কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতা ভিন্ন ভিন্ন দামে একটি দ্রব্যের যে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করতে রাজি থাকে সেই পরিমান হলো ঐ দামগুলির সাপেক্ষে ঐ দ্রব্যের demand।

বোঝার জন্য আমরা যদি ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই:- একজন লোক গুড় কিনবে। সে ১০০ টাকা কেজি দামে ৪ কেজি গুড় কিনতে রাজি, ৯০ টাকা কেজি হলে ৬ কেজি কিনবে এবং ৮০ টাকা কেজি হলে ৭ কেজি কিনবে। তাহলে এখানে গুড়ের demand প্রতি কেজি ১০০ টাকা দামে ৪ কেজি, ৯০ টাকা দামে ৬ কেজি, ৮০ টাকা দামে ৭ কেজি।

কিন্তু, একজনের demand দিয়ে তো বাজার চলে না। তাই, ধরি একটি হাটে গুড়ের demand প্রতি কেজি ১০০ টাকা দামে ৪০০ কেজি, ৯০ টাকা দামে ৬০০ কেজি, ৮০ টাকা দামে ৭০০ কেজি।

বা, একটি দেশে এক বছরে গুড়ের demand প্রতি কেজি ১০০ টাকা দামে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন, ৯০ টাকা দামে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন, ৮০ টাকা দামে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন।

অর্থাৎ উৎপাদকগোষ্ঠী বা বিক্রেতারা যদি প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে চায় তাহলে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন, ৯০ টাকা দরে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন বিক্রি করতে পারবে। আর যদি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারে তাহলে ক্রেতারা ৭ লক্ষ মেট্রিক টন ক্রয় করবে।

চাহিদার উপর ভিত্তি করে উৎপাদক উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন করলে অবিক্রিজনিত লোকশান হয়। আবার, চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন করলে অপটিমাম লাভ করা যায় না বা সবটুকু সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা য়ায় না।

চাহিদার নির্ধারকসমূহ

চাহিদার নির্ধারকসমূহ

চাহিদার নির্ধারকসমূহ

অসংখ্য কারণে এবং পরিস্থিতিতে একজন ক্রেতার কোনো দ্রব্য ক্রয় করার ইচ্ছা প্রভাবিত হতে পারে। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হল:

দ্রব্যের নিজের মূল্য: সাধারণত দ্রব্যের নিজস্ব দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক কাজ করে। যখন দাম বাড়ে, চাহিদার পরিমাণ তখন কমে।

সম্পর্কিত অন্য দ্রব্যের দাম: সম্পর্কিত দ্রব্য সাধারণত পরিপূরক ও পরিবর্তক দ্রব্যকে বুঝায়। পরিপূরক দ্রব্য হলো এমন একটি দ্রব্য যা প্রাথমিক দ্রব্যের সাথে ব্যবহৃত হয়। যেমন চায়ের সাথে দুধ ও চিনি ও গাড়ির সাথে পেট্রল। দুধ ও চিনির দাম বাড়লে চায়ের demand কমে। পেট্রলের দাম বাড়লে গাড়ির demand কমে।  (নিখুঁত পরিপূরক দ্রব্য স্বতন্ত্র আচরণ করে। যদি একটি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে অপর দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ কমে যায়।)

চিনি ও গুড় হল পরিবর্তক দ্রব্য। মানুষ চিনির পরিবর্তে গুড় বা গুড়ের পরিবর্তে চিনি ব্যবহার করে থাকে। গুড়ের দাম কমলে চিনির demand কমে। মানুষ তখন চিনির পরিবর্তে গুড় ক্রয় করে।

ভোক্তার নিজেস্ব আয়: একজন মানুষের নিজস্ব আয় বাড়লে তার ডিমান্ডের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। তখন সে একই দামের দ্রব্য পূর্বের তুলনায় বেশি কিনতে পারে।

ভোক্তার ভবিষ্যৎ মূল্য ও আয় সম্পর্কে আশা: যদি একজন ভোক্তা বুঝতে পারে কোনো বিশেষ দ্রব্যের দাম ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে সে দাম বাড়ার আগেই উক্ত দ্রব্য ক্রয় করতে চাইবে। আবার যদি একজন ভোক্তা তার ভবিষ্যৎ আয় বৃদ্ধি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তাহলে সে বর্তমানে উক্ত দ্রব্য ক্রয় করতে চাইবে। দ্রব্যের আশানুরূপ প্রাপ্যতাও দাম ও চাহিদার উপর পরিবর্তন আনে।

জনসংখ্যা:কোনো দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মোট চাহিদাও বৃদ্ধি পায়।

দ্রব্যের প্রকৃতি: সাধারণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ সর্বদা বেশি হয়।

বিজ্ঞাপন: বিজ্ঞাপন বা প্রচারের ওপরে অনেক সময় demand নির্ভর করে। কাল যে জিনিস চিনতাম না, বিজ্ঞাপনের প্রভাবে আজ মনে হয় সেটি ছাড়া জীবন বৃথা। বিজ্ঞাপনের প্রধান উদ্দেশ্যই হল demand চাহিদা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা।

জীবনযাত্রার মান: দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হয় ভোগ্য দ্রব্যসামগ্রীর demand তত বৃদ্ধি পায়।

উপরিউক্ত নির্ধারকসমূহ ছাড়াও আরও নানা কারণে চাহিদার পরিমাণের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটতে পারে।

চাহিদা অপেক্ষক এবং সমীকরণ

দ্রব্যের demand এর নির্ধারকসমূহের ওপর নির্ভরশীল; demand ও এর নির্ধারকসমূহের নির্ভরশীলতার সম্পর্কের গাণিতিক প্রকাশকে অপেক্ষক বলে।

যেমনঃ Qd=f(P, Ps, Pc, Y, T, Bu,…….)

এখানে,

Qd=চাহিদার পরিমাণ,

P=দ্রব্যের নিজস্ব দাম,

Ps=বিকল্প দ্রব্যের দাম,

Pc=পরিপূরক দ্রব্যের দাম,

Y=ক্রেতার আয়,

T=ক্রেতার রুচি, অভ্যাস,

Bu=ক্রেতার সংখ্যা

 

চাহিদা বিধি কি? What is Law of Demand?

ক্রেতা যুক্তিগ্রাহ্য আচরণ করলে দ্রব্যের demand দামের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য অবস্থা স্থির সাপেক্ষে দ্রব্যের দাম বাড়লে demand কমে এবং দাম কমলে demand বাড়ে । দাম ও চাহিদার মধ্যে এই বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলে ।

অধ্যাপক ডোমেনিক স্যালভেটর (Dominick Salvatore) – এর মতে, “দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক হলো demand বিধি, যা demand রেখার ঋণাত্মক ঢালের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

Demand বিধিতে অন্যান্য অবস্থা স্থির (Ceteris Paribus) বলতে (ক) ভোক্তার অপরিবর্তিত আয়, রুচি ও অভ্যাস, (খ) ভোক্তার যুক্তিগ্রাহ্য আচরণ (গ) বিবেচিত দ্রব্যের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দ্রব্যের স্থির দাম, (ঘ) ভোক্তার সংখ্যা স্থির, (ঙ) সময় স্থির ইত্যাদিকে বোঝায় ।

উপরের শর্তাবলির ভিত্তিতে demand বিধিকে demand সূচি ও demand রেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় ।

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম Exceptions to the Law of Demand 

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম

Demand বিধির অনুমিতি বা শর্তগুলি সব সময় পূরণ হয় না। তাই demand বিধিও সর্বত্র প্রযোজ্য হয় না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় ।

আমরা দেখি কি কি ব্যতিক্রম হতে পারে-

১. রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন: মানুষের রুচিবোধ ক্রয় অভ্যাসকে পরিচালিত করে। রুচি ও অভ্যাস পরিবর্তিত হতে পারে । সেক্ষেত্রে ডিমান্ডেরও পরিবর্তন হয়। তখন demand  বিধি কার্যকর হবে না। এখনকার তরুণেরা বাড়িতে লুঙ্গির পরিবর্তে ট্রাউজার, শর্টস, বারমুডা এগুলি পরতে শুরু করেছে। তাই লুঙ্গির demand কমছে এবং ট্রাউজার, শর্টস, বারমুডা এগুলির demand বাড়ছে।

২. আয়ের পরিবর্তন: ভোক্তার আয়ের স্থির অবস্থা সাপেক্ষে demand বিধি প্রযোজ্য। কিন্তু গতিশীল অর্থনীতিতে মানুষের আয়ের পরিবর্তন হয়। সেই সাথে ক্রয ক্ষমতারও পরিবর্তন হয়। আয় বাড়লে দাম বাড়া সত্ত্বেও demand বাড়তে পারে।

৩. বিকল্প ও পরিপূরক পণ্য: বিকল্প ও পরিপূরক পণ্যের দাম পরিবর্তিত হলে demand বিধির ব্যতিক্রম ঘটে। যেমন চায়ের দাম ঠিক থেকে কফির দাম কমলে চায়ের demand কমবে, কফির demand বাড়বে। আবার , পরিপূরক পণ্য হিসেবে জ্বালানী তেলের দাম বাড়লে গাড়ির দাম স্থির থাকলেও demand কমবে।

৪. জাকজমক বা ভেবলেন (Veblen) পণ্য: জাঁকজমক পণ্যের ক্ষেত্রে demand বিধি কার্যকর নয় । মানুষের সামাজিক মর্যাদা বা আভিজাত্য বৃদ্ধি করে এমন পণ্য ক্রয়ের জন্য মানুষ মূল্য বিবেচনা করে না। এজন্য এ ধরনের পণ্যের দাম বাড়লেও demand কমে না বরং বাড়তে পারে। ঊনবিংশ শতকের মার্কিন অর্থনীতিবিদ থর্সটেইন ভেবলেন এরূপ ভোগকে জাঁকজমক ভোগ ( Conspicuous Consumption ) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । এজন্য তার নামানুসারে এসব জাঁকজমকপূর্ণ দ্রব্যকে ভেবলেন দ্রব্য বলা হয় । যেমন— দামি গাড়ি, দামি অলঙ্কার ইত্যাদি, কোন ব্রান্ডেড আইটেম, অভিজাত হোটেলের ডিনার ইত্যাদি।

৫. গিফেন দ্রব্য : এমন কিছু নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য রয়েছে, যা ব্যবহার না করলে জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন— চাল, সাধারণ কাপড় , তেল ইত্যাদি। এসব দ্রব্যের দাম বাড়লেও অনেক সময় ক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যায় । এই যে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য এ কথা প্রথমে স্যার রবার্ট গিফেন প্রকাশ করেন। তাই তাঁর   নামানুসারে এসব দ্রব্যকে বলা হয় গিফেন দ্রব্য। তিনি ১৮৪০ সালে আইরিশ কৃষকদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন যে, অত্যন্ত নিম্ন আয়ের পরিবারের মৌলিক খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম ও চাহিদার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম বাড়লে demand বাড়ে এবং দাম কমলে demand কমে । এ ধরনের demand রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী  হয়।

৬. ভবিষ্যৎ আশঙ্কা: ধরা যাক কোন একটি দ্রব্যের দাম বেড়েছে। demand বিধি অনুসারে তার demand কমার কথা। কিন্তু না কমে demand বাড়তে পারে। কেন? ক্রেতার মনে যদি আশংকা জাগে যে, ভবিষ্যতে দ্রব্যটির দাম আরও বাড়তে পারে তবে ভবিষ্যতের অধিক মূল্যে ক্রয়ের ঝুঁকি নিরসনের জন্য ক্রেতা বর্তমান দাম বেশি হলেও অধিক পরিমানে দ্রব্য় কিনে রাখে। বাংলাদেশে পিয়াজের দাম বাড়তে থাকলে চাহিদাও বাড়তে থাকে।

৭. ঋতু বা সময়: গরম কালে দাম বাড়লেও বৈদুতিক পাখা ও এসির দাম বাড়লেও তার demand বাড়ে। আবার শীতকালে গরম কাপড়ের দাম বাড়লেও demand বাড়ে।

৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যের ভোগ: কিছু দ্রব্য আছে যা মানুষ কম ব্যবহার করতে পার না বা প্রয়োজনের অতিরিক্তও ব্যবহার করে না। যেমন – লবন, দিয়াশলাই, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ইত্যাদি। তাই মানুষ এগুলির দাম কমলেও বেশি কেনে না; আবার দাম বাড়লেও না কিনে পারে না। এগুলিকে বলা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের দাম হ্রাস বা বৃদ্ধি হলেও এগুলোর চাহিদার বিশেষ হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে না।

৯. ক্রেতার অজ্ঞতা: অনেক সময় ক্রেতা পণ্যের গুনগত মান সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন না। কেউ কেউ দ্রব্যের দামকেই দ্রব্যের গুণগত মানের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করেন এবং বেশি দামের জিনিসের demand প্রকাশ করেন। ফলে ক্রেতার অজ্ঞতার কারণে অধিক অর্থদণ্ড দিয়ে থাকেন। বিক্রেতা অনেক সময় ক্রেতার এই আচরণের সুযোগ নিয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেন। যেমন – কাপড়, জুতা ইত্যাদি।

চাহিদা রেখা কাকে বলে (what is demand curve) :

একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতা ভিন্ন ভিন্ন দামে কোন দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করতে ইচ্ছুক তা যখন একটি রেখার মাধ্যমে দেখানো হয় সে রেখাকে demand রেখা বলে । demand রেখার প্রতিটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট দামে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ demand নির্দেশ করে । অর্থাৎ demand সূচির জ্যামিতিক প্রকাশই হল চাহিদা রেখা । demand সূচির মত demand রেখা থেকেও দ্রব্যের দাম ও চাহিদার বিপরীতমুখী সম্পর্ক জানা যায় ।

 নিচে একটি Demand রেখার উদাহরণ দেওয়া হল-

চাহিদা রেখা

চিত্রঃ চাহিদা রেখা

রেখাচিত্রে Ox ভূমি অক্ষে  দ্রব্যের demand ও Oy লম্ব অক্ষে দাম দেখানো হয়েছে । DD1 হল demand রেখা। এ রেখার R বিন্দুতে P1 দামে দ্রব্যের demand Q1 একক। S, T ও U বিন্দুতে যথাক্রমে P2 দামে দ্রব্যের demand Q2 একক, P3 দামে দ্রব্যের demand Q3 একক এবং P4 দামে দ্রব্যের demand Q4 একক। অর্থাৎ চাহিদা রেখার বিন্দুগুলো দ্রব্যের ভিন্ন ভিন্ন দামে চাহিদার ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ নির্দেশ করছে । দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক থাকায় demand রেখা সাধারণত বাম থেকে ডান দিকে নিম্নগামী হয়।

Demand রেখা বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হওয়ার কারণসমূহ:

Demand রেখা ডানদিকে নিম্নগামী হওয়ার মূল কারণ হলো demand বিধি । demand বিধিতে অন্যান্য অবস্থা স্থির থাকলে দ্রব্য ও সেবার দামের সাথে চাহিদার পরিমাণের বিপরীত সম্পর্ক নির্দেশ করে। এ সম্পর্কের কারণেই demand রেখা বাম থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয় । তবে এ সম্পর্কে যেসব কারণ রয়েছে, তা হলো :

  • ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি: এ বিধি অনুযায়ী কোনো দ্রব্যের ভোগ বাড়লে ভোক্তার নিকট তার প্রান্তিক উপযোগ কমতে থাকে এবং এক পর্যায়ে দ্রব্যটির প্রান্তিক উপযোগ দামের সমান হয় । অর্থাৎ দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ বা দাম হ্রাস পাওয়ার কারণে তার ভোগ বা demand বাড়ে । আবার দাম বা প্রান্তিক উপযোগ বেশি হলে দ্রব্যের ভোগ বা demand কম হয় । এজন্য demand রেখা ডানে নিম্নগামী হয় ।
  • আয় প্রভাব: দ্রব্যের দাম কমলে ক্রেতা একই পরিমাণ দ্রব্য ক্রয়ের জন্য আগের চেয়ে কম অর্থ ব্যয় করে। ফলে ক্রেতা তার উদ্বৃত্ত অর্থ দ্বারা অতিরিক্ত দ্রব্য ক্রয় করতে পারে। পক্ষান্তরে, দাম বাড়লে ক্রেতার প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় তার চাহিদাও কমে যায়।
  • পরিবর্তক প্রভাব: ধরি, গুড় ও চিনি দুটি পরিবর্তক দ্রব্য। গুড়ের দাম কমে গেলে ক্রেতা চিনির পরিবর্তে গুড় বেশি ক্রয় করে। এর ফলে সস্তা পণ্যটির demand বাড়ে। এজন্য দ্রব্যের দাম ও চাহিদার মধ্যে যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তা নিম্নগামী demand রেখার দ্বারাই প্রকাশ পায়
  • ক্রয়ক্ষমতা বা সামর্থ্য: কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে তা অনেক ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় । ফলে তার সামগ্রিক demand কমে । আবার দাম কমলে অনেক ক্রেতা সেটি ক্রয় করতে সমর্থ হয়। এভাবে দাম ও চাহিদার বিপরীতমুখী সম্পর্ক দেখা যায়— যা নিম্নগামী demand রেখার দ্বারা প্রকাশ হয়।
  • ঢাল ঋণাত্মক: demand রেখার ঢাল ঋণাত্মক বিধায় দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান । যেমন— কোনো দ্রব্যের দাম ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকায় বৃদ্ধি পেলে, চাহিদার পরিমাণ ১০ একক থেকে হ্রাস পেয়ে ৮ একক হলে, demand রেখা বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়।

চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা (PED)

কোনো দ্রব্যের দামের পরিবর্তন এর ফলে চাহিদার যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তার মাত্রাকে চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা বলে। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার দ্বারা চাহিদার শতাংশিক পরিবর্তন ও দামের শতাংশিক পরিবর্তন এর অনুপাতকে বোঝায়। চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে দাম ছাড়া চাহিদার অন্যান্য নির্ধারকসমূহ অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকবে। চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে সূত্র ব্যবহার করা হয় তা হলো: (ΔQP)×(P/Q)। এখানে Q, চাহিদার পরিমাণ এবং P, দ্রব্যের দাম।

সারসংক্ষেপ

অর্থনীতিতে demand হল কোনো পণ্য বা সেবার উপযোগের প্রয়োজনীয়তা।

একজন ক্রেতা ভিন্ন ভিন্ন দামে যে পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা পেতে ইচ্ছুক তার পরিমাণের দ্বারা demand প্রকাশ করা হয়।

কোনো নির্দিষ্ট দামে ভোক্তা যে পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে আগ্রহী হয় তার পরিমাণকে চাহিদার পরিমাণ বলে।

দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যকার সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলা হয়।

দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার সম্পর্ক বিপরীত।

Demand রেখা বাম দিক থেকে ডান দিকে নিম্নমুখী।