Table of Contents

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি? What Is a Central Bank?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) একটি স্বাধীন জাতীয় কর্তৃপক্ষ (Independent National Authority) যেটি আর্থিক নীতি পরিচালনা করে, ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্থনৈতিক গবেষণাসহ আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে। এর লক্ষ্য হল দেশের মুদ্রা স্থিতিশীল করা, বেকারত্ব কমিয়ে রাখা এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে “শেষ অবলম্বনের ঋণদাতা” (Last lender of resort) হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যার অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি (Commercial Banks) যখন সরবরাহের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না তখন এটি দেশের অর্থনীতিকে তহবিল সরবরাহ করার জন্য দায়িত্ব পালন করে। অন্য কথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ব্যর্থ হতে বাধা দেয়। যাইহোক, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির প্রাথমিক লক্ষ্য হল মূল্যস্ফীতি (inflation)  নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল রাখা। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের মুদ্রানীতির (Monetary Policy) নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসাবেও কাজ করে এবং প্রচলিত নোট এবং মুদ্রার একমাত্র প্রদানকারী এবং প্রিন্টার (Sole issuer and printer of current notes and coins)

সময় প্রমাণ করেছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারী রাজস্ব নীতির (Fiscal Policy) থেকে স্বাধীন থেকে এবং তাই কোনো শাসনব্যবস্থার রাজনৈতিক (Ruling regime)  সংশ্লিষ্ঠতা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে এই ক্ষমতাগুলিতে সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে পারে। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং স্বার্থ (Commercial banking interests) থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা উচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ কি?

  • একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দেশের মুদ্রানীতি পরিচালনা করে, অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে, এবং প্রায়ই নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি এবং স্থির জিডিপি বৃদ্ধি বজায় রাখার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন করে।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক একটি মাইক্রো-স্কেলে কাজ করে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির রিজার্ভ অনুপাত (Cash Reserve Ratio – CRR) নির্ধারণ করে এবং প্রয়োজনে শেষ অবলম্বনের ঋণদাতা ((Last lender of resort)) হিসাবে কাজ করে৷
  • কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হল একটি স্বাধীন জাতীয় কর্তৃপক্ষ (Independent National Authority) যা একটি দেশের মুদ্রানীতি (Monetary Policy) পরিচালনা করে, ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আর্থিক পরিষেবা (Financial service) প্রদান করে।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে মুদ্রানীতির তিনটি টুল রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা (Reserve requirements), খোলা বাজারের কার্যক্রম (Open Market Operations – OMO) এবং লক্ষ্যমাত্রার সুদের হার (Target Interest Rates)
  • কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক একটি দেশের সরকারী এবং বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলিকে সহায়তা প্রদান করে৷
  • এটি বিনিময় হার (exchange rates) এবং বৈদেশিক মুদ্রা (foreign currencies) পরিচালনা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংজ্ঞা (Definition of Central Bank) 

একটি পরিচালনা পর্ষদ (Governing Body)  দ্বারা পরিচালিত হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ (Independent Authority) । তাদের আর্থিক নীতি, আর্থিক পরিষেবা প্রদান, নিম্ন ব্যাঙ্কগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং গবেষণা পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য একটি দেশের মুদ্রা ও অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা।

বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সদস্য ব্যাংকগুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। দেশের প্রধান নির্বাচিত কর্মকর্তা পরিচালকদের নিয়োগ করেন। জাতীয় আইনসভা (National Legislature) তাদের অনুমোদন করে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশের দীর্ঘমেয়াদী নীতির লক্ষ্যগুলির (Long term policy goals) সাথে সংযুক্ত রাখে। একই সময়ে, এটি তার দৈনন্দিন কার্যক্রমে (Routine duties) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত  থাকে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড (The Bank of England) সর্বপ্রথম সেই মডেলটি প্রতিষ্ঠা করে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ (The U.S. Federal Reserve) আরেকটি উদাহরণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক – বাংলাদেশ ব্যাংক

  • সুইডেন ১৬৬৮ সালে বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক, Riksbank তৈরি করে।
  • ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড (The Bank of England) ১৬৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • নেপোলিয়ন ১৮০০ সালে ব্যাঙ্কুয়েট ডি ফ্রান্স (Banquet de France) তৈরি করেন।
  • কংগ্রেস ১৯১৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ (US Federal Reserve) প্রতিষ্ঠা করে।
  • ব্যাংক অফ কানাডা (The Bank of Canada) ১৯৩৫ সালে শুরু হয়েছিল।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান বুন্দেসব্যাঙ্ক (Bundesbank) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ১৯৯৮ সালে, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (the European Central Bank) সমস্ত ইউরোজোনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিস্থাপন করে।

Central Bank of India

  • বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক  অর্ডার, ১৯৭২ (১৯৭২ সালের P.O. নং ১২৭) পাশ করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) হিসাবে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে পুনর্গঠিত করেছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং দেশের মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থার জন্য সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
  • সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Central Bank of India) ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিভাবে কাজ করে (How Central Banks Work)

আর্থিক নীতি (Monetary Policy)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক ব্যবস্থায় তারল্য (Liquidity) নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের কাছে তিনটি মুদ্রানীতির হাতিয়ার (Tools of monetary policy) রয়েছে।

প্রথমত, তারা একটি রিজার্ভ প্রয়োজনীয়তা (Reserve Requirements) সেট করে। এটি সদস্য ব্যাঙ্কের হাতে থাকা নগদ (Cash in hand) পরিমাণ। ব্যাংক কতটা ঋণ দিতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি ব্যবহার করে।

দ্বিতীয়ত, তারা সদস্য ব্যাঙ্ক থেকে সিকিউরিটিজ ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য খোলা বাজারের কার্যক্রম (Open Market Operations _ OMO) ব্যবহার করে। এটি রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তন না করে হাতে নগদ পরিমাণ পরিবর্তন করে। তারা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় এই সরঞ্জামটি ব্যবহার করেছিল। ব্যাঙ্কগুলি ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারী বন্ড এবং বন্ধকী-সমর্থিত সিকিউরিটিজ (Mortgage-Backed Securities) কিনেছিল।

তৃতীয়ত, তারা তাদের সদস্য ব্যাঙ্কের সুদের হারের উপর লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এটি ঋণ, বন্ধকী এবং বন্ডের জন্য হার নির্দেশ করে। সুদের হার বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি (growth) মন্থর করে, মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে। এটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি  (Contractionary monetary policy) হিসাবে পরিচিত। হার কমানো বৃদ্ধি (growth)কে উদ্দীপিত করে, মন্দা প্রতিরোধ বা সংক্ষিপ্ত করে। একে বলা হয় সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি (Expansionary monetary policy)। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতদূর পর্যন্ত হার কমিয়েছে যে তারা নেতিবাচক হয়ে উঠেছে।

মুদ্রানীতি জটিল। অর্থনীতিতে এর সম্পূর্ণ প্রভাব পড়তে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

ব্যাংক প্রবিধান (Bank Regulation)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সম্ভাব্য ঋণ ক্ষতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত রিজার্ভ প্রয়োজন। তারা আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার এবং আমানতকারীদের তহবিল রক্ষা করার জন্য দায়ী। ২০১০সালে, ডড-ফ্রাঙ্ক ওয়াল স্ট্রিট সংস্কার আইন (Dodd-Frank Wall Street Reform Act ) ফেডকে আরও নিয়ন্ত্রক কর্তৃত্ব দিয়েছে।

এটি কনজিউমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রোটেকশন এজেন্সি তৈরি করেছে। এটি নিয়ন্ত্রকদের বড় ব্যাঙ্কগুলিকে বিভক্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে যাতে তারা “ব্যর্থ হওয়ার জন্য খুব বড়” (“too big to fail”) হয়ে না যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সদস্য  ব্যাংকগুলিকে  নিজেদের লাভের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ডেরিভেটিভ কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করতে নিষেধ করে।

আর্থিক সেবা প্রদান (Providing Financial Services)

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং দেশের সরকারের জন্য ব্যাঙ্ক হিসাবে কাজ করে। তারা চেক প্রক্রিয়া করে এবং তাদের সদস্যদের অর্থ ধার দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে  (Foreign Currency reserve) মুদ্রা সংরক্ষণ করে। তারা বিনিময় হার পরিবর্তন করতে এই রিজার্ভ ব্যবহার করে। নিজস্ব মুদ্রার মান ঠিক রাখতে তারা বৈদেশিক মুদ্রা যোগ করে, সাধারণত ডলার বা ইউরো। এটিকে পেগ (peg) বলা হয় এবং এটি রপ্তানিকারকদের তাদের দাম প্রতিযোগিতামূলক রাখতে সাহায্য করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে বিনিময় হার (exchange rates) নিয়ন্ত্রণ করে। সরবরাহ এবং চাহিদাকে প্রভাবিত করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় এবং বিক্রি করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা (The role of Central Bank)

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

মুদ্রানীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং (Monetary Policy and Central Banking)

Central Bank অর্থনৈতিক ও আর্থিক (Economic and fiscal) স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা কম এবং স্থিতিশীল মুদ্রাস্ফীতি অর্জনের জন্য মুদ্রানীতি পরিচালনা করে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি মোকাবেলা করতে এবং অস্থির বিনিময় হার (Volatile exchange rate) পরিচালনা করতে তাদের টুলকিটগুলি প্রসারিত করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সুস্পষ্ট নীতি কাঠামো প্রয়োজন। প্রতিটি দেশের পরিস্থিতির জন্য তৈরি অপারেশনাল প্রক্রিয়াগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগুলির কার্যকারিতা বাড়ায়।

আর্থিক নীতি (Monetary policy)

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির একটি মূল ভূমিকা হল মূল্য স্থিতিশীলতা (Price stability) (নিম্ন এবং স্থিতিশীল মুদ্রাস্ফীতি) অর্জনের জন্য এবং অর্থনৈতিক ওঠানামা (Economic fluctuations) পরিচালনা করতে সহায়তা করার জন্য মুদ্রানীতি পরিচালনা করা। যে নীতি কাঠামোর (Policy framework) মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি কাজ করে তা সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বড় পরিবর্তন সাপেক্ষে হয়েছে।

সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি সাধারণত খোলা বাজারের ক্রিয়াকলাপের (Open Market Operations – OMO) মাধ্যমে অর্থের সরবরাহ সামঞ্জস্য করে মুদ্রানীতি পরিচালনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক “বিক্রয় এবং পুনঃক্রয়” (Sale and Repurchase) চুক্তির অধীনে সরকারি বন্ড বিক্রি করে অর্থের পরিমাণ কমাতে পারে, যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থ নেওয়া হয়। এই ধরনের খোলা বাজারের ক্রিয়াকলাপের উদ্দেশ্য হল স্বল্পমেয়াদী সুদের হার পরিচালনা করা, যা দীর্ঘমেয়াদী হার এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে।

অনেক দেশে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে, আর্থিক সঞ্চালন প্রক্রিয়া (Financial transaction process) উন্নত অর্থনীতির মতো কার্যকর নয়। মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে, দেশগুলির উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বল্পমেয়াদী সুদের হার (Short term interest rates)  স্থির করতে সক্ষম করার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের পর, উন্নত অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি স্বল্পমেয়াদী হার শূন্যের কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত সুদের হার কমিয়ে মুদ্রানীতি সহজ করে। মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি (Inflation risk) বাড়ার সাথে সাথে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি দীর্ঘমেয়াদী হার আরও কমিয়ে আনা এবং আর্থিক শিথিলকরণের (Financial relaxation) লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী বন্ড ক্রয়সহ অপ্রচলিত আর্থিক নীতি গ্রহণ করে (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরো অঞ্চল এবং জাপানে)। এমনকি কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পমেয়াদী হার শূন্যের নিচে নিয়ে গেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার শাসন এবং নীতি (Foreign exchange regimes and policies)

একটি মুদ্রার কাঠামোর পছন্দ একটি বিনিময় হার ব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। নমনীয় বিনিময় হার একটি স্বাধীন মুদ্রানীতির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। নমনীয় বিনিময় হার স্বাধীন মুদ্রানীতির জন্য সীমিত করে। যদিও কিছু দেশ বিনিময় হার ঠিক করে না, তবুও তারা এটির স্তর পরিচালনা করার চেষ্টা করে। একটি সম্পূর্ণ নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা একটি কার্যকর মুদ্রাস্ফীতি টার্গেটিং কাঠামোকে সমর্থন করে।

ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নীতি (Macroprudential policy)

দেশগুলিকে ডেডিকেটেড আর্থিক নীতির সাথে সামগ্রিকভাবে আর্থিক ব্যবস্থার ঝুঁকি ধারণ করতে হবে। যেসব দেশের  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নীত করার জন্য ম্যান্ডেট রয়েছে তারা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফাংশনগুলিকে আপগ্রেড করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নীতি ( macroprudential policy)  কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা ।

ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নীতি কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রয়োজন। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নীতি পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত কারণ তাদের সিস্টেমিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রয়েছে। উপরন্তু, তারা প্রায়ই তুলনামূলকভাবে স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত হয়।

অনেক দেশে, আইনপ্রণেতারা Central Bank বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে একটি নিবেদিত কমিটির কাছে ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল ম্যান্ডেট অর্পণ করেছেন। ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নীতি বাস্তবায়নের জন্য যে মডেলই ব্যবহার করা হোক না কেন, আর্থিক শিল্প এবং রাজনৈতিক চাপের বিরোধিতা মোকাবেলা করতে এবং সামষ্টিক নীতির বৈধতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে প্রাতিষ্ঠানিক সেটআপ যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া উচিত।

এটি নিশ্চিত করতে হবে যে নীতিনির্ধারকদের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয় আইনী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য তত্ত্বাবধায়ক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল পলিসি অ্যাকশনে সিস্টেমিক দুর্বলতার বিশ্লেষণ ম্যাপ করে (ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল পলিসিতে স্টাফ গাইডেন্স নোট) এই নতুন নীতি ফাংশনটি কার্যকর করার জন্য একটি নিবেদিত নীতি প্রক্রিয়া প্রয়োজন।

COVID-19 মহামারীর প্রতিক্রিয়া হিসাবে, অনেক দেশ আর্থিক ব্যবস্থায় চাপ শোষণ এবং অর্থনীতিতে ঋণের বিধানকে সমর্থন করার লক্ষ্যে অন্যান্য নীতির পরিপূরক করার জন্য ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল বাফারগুলি শিথিল করেছে। এই ধরনের শিথিলতা আইএমএফের বিদ্যমান কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে।

সেন্ট্রাল ব্যাংক কীভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে (How the Central Bank Influences an Economy)

বলা যেতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দুটি প্রধান ধরণের কাজ আছে: (১) মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্য স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক এবং (২) শেষ অবলম্বন হিসাবে ঋণদাতা হিসাবে কাজ করার সময় মাইক্রোইকোনমিক।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব (Macroeconomic Influences)

যেহেতু এটি মূল্য স্থিতিশীলতার জন্য দায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওপেন মার্কেট লেনদেন (ওএমও) করে বাজারকে তারল্য দিয়ে বা অতিরিক্ত তহবিল শোষণ করে সরাসরি মুদ্রাস্ফীতির স্তরকে প্রভাবিত করে।

বাজারে টাকার পরিমাণ বাড়াতে এবং ঋণের সুদের হার (খরচ) কমাতে Central Bank সরকারি বন্ড, বিল বা অন্যান্য সরকারি নোট কিনতে পারে। তবে, এই ক্রয়ের ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিও হতে পারে। যখন মুদ্রাস্ফীতি কমাতে অর্থ গ্রহণের প্রয়োজন হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে সরকারি বন্ড বিক্রি করবে, যা সুদের হার বৃদ্ধি করে এবং ঋণ গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করে। ওপেন মার্কেট অপারেশন হল মূল মাধ্যম যার মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি, অর্থ সরবরাহ এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।

ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব (Microeconomic Influences)

শেষ অবলম্বনের ঋণদাতা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা বাণিজ্যিক ব্যাংকিং থেকে তাদের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাকে ঠেলে দিয়েছে। একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ক্লায়েন্টদের আগে আসলে আগে পরিষেবার ভিত্তিতে তহবিল অফার করে।

যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে তার ক্লায়েন্টদের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট তারল্য না থাকে (বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত পুরো বাজারের চাহিদার সমান রিজার্ভ রাখে না), বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত তহবিল ধার নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যেতে পারে। এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক উপায়ে সিস্টেমকে স্থিতিশীলতা প্রদান করে; কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বিশেষ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষ নিতে পারে না। যেমন, অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক-ব্যাঙ্কের রিজার্ভ ধারণ করবে যা প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের আমানতের অনুপাতের উপর ভিত্তি করে। এইভাবে, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জন্য সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের প্রয়োজন হতে পারে, উদাহরণস্বরূপ, একটি ১:১০ রিজার্ভ/আমানত অনুপাত।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি নীতি কার্যকর করা বাজারে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার আরেকটি উপায় হিসাবে কাজ করে। তবে সব কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিজার্ভ জমা করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহ্যগতভাবে করে কিন্তু যুক্তরাজ্য তা করে না। যাইহোক, ইউএস সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক কোভিড-19 মহামারী চলাকালীন ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে কার্যকর রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা শূন্য শতাংশে নামিয়ে দিয়েছে।

যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অন্যান্য ঋণ সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদী তহবিল ধার করতে পারে তাকে ডিসকাউন্ট রেট বলা হয় (যা Central Bank দ্বারা সেট করা হয় এবং সুদের হারের জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে)।

যুক্তি হল যে, খোলা বাজারের লেনদেনগুলিকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য, ডিসকাউন্ট রেট ব্যাঙ্কগুলিকে চিরস্থায়ী ঋণ নেওয়া থেকে বিরত রাখবে। চিরস্থায়ী ঋণ বাজারের অর্থ সরবরাহ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিকে ব্যাহত করে। খুব বেশি ধার করে, বাণিজ্যিক ব্যাংক সিস্টেমে আরও বেশি অর্থ সঞ্চালন করবে। ডিসকাউন্ট রেট বারবার ব্যবহারে খুব বেশি ধার করাকে আকর্ষণহীন করে সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে।

ক্রান্তিকালীন অর্থনীতি (Transitional Economies)

আজ উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলি নিয়ন্ত্রিত  থেকে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরের মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রধান উদ্বেগ প্রায়শই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এটি একটি স্বাধীন Central Bank তৈরির দিকে পরিচালিত করতে পারে তবে কিছু সময় নিতে পারে, কারণ অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়।

কিন্তু সরকারী হস্তক্ষেপ, রাজস্ব নীতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক উন্নয়নশীল দেশ নাগরিক সমস্যা বা যুদ্ধের সম্মুখীন হয়, যা একটি সরকারকে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির উন্নয়ন থেকে তহবিল সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারে।

তথাপি, একটি বিষয় যা নিশ্চিত বলে মনে হয় তা হল, একটি বাজার অর্থনীতির বিকাশের জন্য একটি স্থিতিশীল মুদ্রার প্রয়োজন, যেটি একটি স্থির বা ভাসমান বিনিময় হারের (floating exchange rate) মাধ্যমে অর্জন করা হয়। যাইহোক, শিল্প এবং উদীয়মান উভয় অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি গতিশীল কারণ অর্থনীতির বিকাশের পর্যায় নির্বিশেষে পরিচালনা করার কোন নিশ্চিত উপায় নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা (Criticism of Central Banks)

যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি অর্থনীতিকে খুব বেশি উদ্দীপিত করে তবে তারা মুদ্রাস্ফীতিকে ট্রিগার করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতিকে প্লেগের মতো এড়িয়ে চলে। চলমান মুদ্রাস্ফীতি প্রবৃদ্ধির যেকোনো সুবিধা নষ্ট করে দেয়। এটি ভোক্তাদের জন্য দাম বাড়ায়, ব্যবসার জন্য খরচ বাড়ায় এবং লাভ কমিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিকে সুদের হার রোধ করতে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

রাজনীতিবিদ এবং কখনও কখনও সাধারণ জনগণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। কারণ তারা সাধারণত নির্বাচিত কর্মকর্তাদের থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে। তারা প্রায়ই অর্থনীতি নিরাময় করার প্রচেষ্টায় অজনপ্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পল ভলকার (১৯৭৯ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত) সুদের হার আকাশচুম্বী করেছিলেন। এটি ছিল পলাতক মুদ্রাস্ফীতির একমাত্র চিকিৎসা। সমালোচকরা তাকে তিরস্কার করেছেন। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের কাজগুলি প্রায়শই বোঝা যায় না, তাই সন্দেহের মাত্রা বাড়ে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ( Frequently Asked Questions – FAQs)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিভাবে অর্থ সরবরাহ বাড়ায়? How do central banks increase the money supply?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ বাড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এটি সাধারণত খোলা বাজারে সিকিউরিটিজ ক্রয় করে, যা ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার জন্য আরও অর্থ দেয়৷ এটি ব্যাঙ্কগুলির জন্য রিজার্ভ প্রয়োজনীয়তাও পরিবর্তন করতে পারে, অতিরিক্ত রিজার্ভের জন্য এটি যে হার প্রদান করে তা সামঞ্জস্য করতে পারে এবং ফেড তহবিলের হার কমিয়ে দিতে পারে। এটি রাতারাতি ঋণের (overnight lending) জন্য ব্যাঙ্কগুলি একে অপরকে কতটা চার্জ করবে তা নির্ধারণ করে।

শেষ কথা (The Bottom Line)

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি একটি জাতির (বা জাতির গোষ্ঠী) জন্য আর্থিক ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের জন্য দায়বদ্ধ।  মুদ্রানীতির তত্ত্বাবধান থেকে শুরু করে মুদ্রার স্থিতিশীলতা, নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি এবং পূর্ণ কর্মসংস্থানের মতো নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়ন পর্যন্ত অন্যান্য বিস্তৃত দায়বদ্ধতাও  রয়েছে। গত শতাব্দীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্ব পেয়েছে। একটি দেশের মুদ্রার স্থিতিশীলতা (Currency stability) নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংকিং এবং মুদ্রা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক এবং কর্তৃপক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে।

সমসাময়িক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সরকারি মালিকানাধীন, কিন্তু তাদের দেশের মন্ত্রণালয় বা অর্থ বিভাগ থেকে আলাদা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রায়শই “সরকারি ব্যাংক” বলা হয় কারণ এটি সরকারী বন্ড এবং অন্যান্য উপকরণের ক্রয়-বিক্রয় পরিচালনা করে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে না।

অবশ্যই, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি দেশ থেকে দেশে পরিবর্তিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হতে থাকে।