Table of Contents
কৃষি ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
বিশ্বব্যাপী কৃষি ব্যবসা ও কৃষি ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি, উচ্চ-ক্যালোরি খাদ্যের দিকে উদীয়মান অর্থনীতির রূপান্তর: এই সমস্ত পরিবর্তন খাদ্যের চাহিদা বাড়ায়। একই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলাফল বিশ্বকে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এই বিষয়গিুলি নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমে দরকার পণ্যীকরণের প্রক্রিয়া যা কৃষি পণ্যের বৈশিষ্ট্য তা ভালোভাবে বুঝা। প্রথমত, পণ্যের স্বতন্ত্র দিকগুলি বিশ্লেষণ করতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে, কৃষি-খাদ্য মূল্য শৃঙ্খলে মূল্য সংক্রমণে শিল্পায়ন এবং পরিষেবার অর্থনীতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা জরুরী।
উদ্দেশ্যঃ
- প্রধান বৈশ্বিক কৃষি ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলি গভীরভাবে চিহ্নিতকরণ
- খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং পরিবর্তনশীল খাদ্যাভ্যাস এবং বিশ্বাস পরীক্ষাকরণ
- মূল্য শৃঙ্খলে সংযোজিত মূল্যের বন্টন ব্যাখ্যাকরণ এবং কৃষি পণ্যের পণ্যীকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা
লক্ষ্যঃ
এই প্রবন্ধের লক্ষ্য হল আধুনিক কৃষি ব্যবসার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলি বোঝার চেষ্টা করা
- খামার থেকে খুচরা বিক্রেতা, ইনপুট প্রদানকারী থেকে ব্যবসায়ী, এই মূল্য শৃঙ্খলের খেলোয়াড়রা (players of value chain) একটি জটিল ব্যবসায়িক পরিবেশে যোগাযোগ করে যেখানে প্রকৃতি, নীতি, প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলিকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম এবং আসন্ন সুযোগ দখল করতে একত্রিত করতে হবে।
- একাডেমিয়া এবং ব্যবসা একটি ঐতিহাসিক বাঁকের মুখোমুখি। কল্পনাতীত বড় ধরণের বাঁধা অতিক্রম করতে ব্যবসা এবং জীবনযাপন পদ্ধতির একত্রে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
- জাতিসংঘ দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও মৌলিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে । এই ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৩টি অর্জনে কৃষি ব্যবসা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
- জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, পানির ঘাটতি এবং ভূমি প্রতিযোগিতার মতো মানবজাতির জন্য আগামী ৩০ বছরের চ্যালেঞ্জগুলি আমাদের বুঝতে হবে।
- কৃষি ব্যবসায় কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির সরাসরি প্রভাব বিশ্লেষণে ব্যবসায়িক ঘটনা, বিভিন্ন কৃষি ব্যবস্থা, সরবরাহ চেইন, সাম্প্রতিক ইতিহাস, অর্থনীতি এবং প্রতিযোগিতামূলক কৌশলসহ অন্যান্য বাজার পরীক্ষা করতে হবে।
- কৃষি শিল্পে সমস্ত আন্তঃসম্পর্ক, সমস্ত সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক কৃষি ব্যবসার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় আনতে হবে।
- স্থায়িত্ব (Sustainability) কৃষি ব্যবসায় বৃদ্ধি এবং উন্নতির চাবিকাঠি। প্রকৃতির অত্যাবশ্যক সম্পদ কী, কৃষি কীভাবে তাদের প্রভাবিত করছে, খেলোয়াড়রা কীভাবে উন্নত কৌশল এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সেগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছে তা বুঝতে হবে।
- কৃষি ব্যবসাকে একটি ভবিষ্যত-প্রমাণ (future-proof) ব্যবসায় পরিণত করার পদক্ষেপ হিসাবে উদ্ভাবন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভবিষ্যতের চাহিদা মোকাবিলায় শীর্ষস্থানীয় পরিচালক এবং উদ্যোক্তাদের অবদানের মাধ্যমে আগামী ৩০ বছরে উন্নতির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।
দৃষ্টিভঙ্গির চলমান বৈশ্বিক পরিবর্তন
কোনও ব্যবসাকে সফল হতে হলে তাকে আগামী ৩০ বছরে মানবজাতির মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অন্তত একটিকে মোকাবেলা করতে হবে – এই ধারণার উপর ভিত্তি করেবিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি চলমান পরিবর্তন হচ্ছে। সফল হওয়ার জন্য ব্যবসাকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপদতা, পরিবর্তিত ভোক্তা আচরণ এসমস্ত চাহিদা পূরণ করতে হবে। কিছু উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর ফোকাস করতে পারে। কিছু ব্যবসার লক্ষ্য হতে পারে খাদ্য বর্জ্য হ্রাস। কিন্তু কৃষি ব্যবসার খেলোয়াড়রা এইসব চ্যালেঞ্জের প্রতিটির সাথে জড়িত।
কৃষি ব্যবসার চ্যালেঞ্জ আমাদের আগে বুঝতে হবে কৃষি ব্যবসার চ্যালেঞ্জগুলি কী কী? বিশ্বব্যাপী এবং স্থানীয় স্কেলে এদের পরিণতি কি? এবং সর্বোপরি, কিভাবে অদূর ভবিষ্যতে এই চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে কৃষি এবং কৃষি ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
খামার, খাদ্য প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী বা ইনপুট প্রদানকারী অর্থাৎ কৃষি ব্যবসার সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্ত খেলোয়াড়দের মধ্যে দুটি জিনিস মিল রয়েছে: তারা দীর্ঘকাল ধরে রয়েছে এবং তারা সকলেই এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তারা বাধ্য হচ্ছে তাদের কৌশল পর্যালোচনা করে একটি দ্রুত-গতির ভবিষ্যতের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে।
২০৫০ সালের পথে টেকসইতা (sustainability) অর্জনের জন্য মানবজাতিকে সরাসরি ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন ধরনের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি খেলোয়াড়কে এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্য দিয়ে নিজস্ব উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তারা যে অভিযোজন কৌশল অনুসরণ করবে তা তাদের অবস্থান, ইতিহাস, পটভূমি এবং ব্যবস্থাপনাগত ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি
প্রথম এবং কঠিন কৃষি ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কৃষি ব্যবসা যতদূর সংশ্লিষ্ঠ, আমাদের উত্পাদন এবং খরচ মডেলের পক্ষে খাওয়ানোর জন্য মুখের সংখ্যা অনেক বেশি।
মানব প্রজাতির ব্যক্তি সংখ্যা ১ বিলিয়নে পৌঁছাতে প্রায় ৩০০,০০০ বছর লেগেছে। সেখান থেকে ২য় বিলিয়নে পৌঁছাতে ১৩০ বছর, ৩য় বিলিয়নে পৌঁছাতে ৩০ বছর, ৪র্থ বিলিয়ন হতে ১৫ বছর, ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম বিলিয়ন প্রতিটির জন্য ১২ বছর লেগেছে।
২০১১ সালের ৩১ অক্টোবরে যেখানে ৭ বিলিয়ন মানুষ ছিল মাত্র ১১ বছরে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সেটি দাঁড়িয়েছে ৮ বিলিয়নে। প্রক্ষেপন অনুযায়ী ২০৫০ সালে ১০ বিলিয়ন মানুষের মুখে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তুলে দেওয়া ভবিষ্যৎ কৃষি, কৃষি বিজ্ঞান ও কৃষি ব্যবসার সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি গাণিতিক না হয়ে জ্যামিতিক হারে হয়েছে। ৩০০০০০ বছর ধরে প্রায় সমতল, বক্ররেখাটি ১ম এবং ২য় শিল্প বিপ্লবের সাথে খাড়া হতে শুরু করেছে। সর্বোপরি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যয়যোগ্য আয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। শিল্পোন্নয়ন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুধু উদ্বৃত্তই তৈরি করেনি, বরং এটি আধুনিক চিকিৎসা ও যান্ত্রিক কৃষির বিকাশকেও প্রজ্বলিত করেছে। অন্য কথায়, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে এবং আরও খাবার বেড়েছে।
তন্তু বা আঁশ (fibers), খাদ্য বা শক্তির জন্য ব্যবহার করা জমির মধ্যে একটি অমীমাংসিত বাণিজ্য বন্ধ (trade-off )। যেহেতু পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ অনাহারে আছে, তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতভাবে এখনই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এনার্জি চ্যালেঞ্জ
কিন্তু শক্তি নিরাপত্তা (energy security) সম্পর্কে কি বলবেন? শক্তি ছাড়া, কোন দেশ বিকাশ লাভ এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
শক্তির দিক থেকে, পৃথিবী এখনও একটি খুব অনিরাপদ জায়গা। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ বা ১.২ বিলিয়ন মানুষের বিদ্যুতে অ্যাক্সেস নেই। জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ রান্নার জন্য কঠিন বায়োমাস ব্যবহার করে। শক্তি সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ছে। অন্য কথায়, গ্লোবাল এনার্জি সিস্টেম তার উপর স্থাপিত আশা-আকাঙ্ক্ষার ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে।
যেহেতু ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমরা আজ যা পাচ্ছি তার থেকে আমাদের আরও বেশি খাদ্য, জল এবং শক্তির প্রয়োজন হবে। জলবায়ু এবং দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে বাসযোগ্যতার পরিস্থিতি আরও খারাপ না করে আমাদের এটি করতে হবে।
ভূমি প্রতিযোগিতা
জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি এখনও ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং আবাদযোগ্য জমির চাহিদা বাড়ছে, শুধুমাত্র খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য নয়, জৈব জ্বালানী, আঁশ এবং কাঠের জন্যও। এটি ভূমি প্রতিযোগিতার একটি জোড়া চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কাঁচামালের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে হবে এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার পটভূমিতে পুষ্টিকর খাদ্যের টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহৎ ভূমি অধিগ্রহণ, যা মূলত কৃষি জ্বালানি উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত ছিল, এখন খাদ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা কোনো না কোনোভাবে ন্যায়সঙ্গতভাবে আবাদি জমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দিচ্ছে, কিন্তু তা প্রতিদিনই সংকুচিত হচ্ছে। ৬০-এর দশকে জনপ্রতি ০.৪ হেক্টরের জায়জায় এখন আমাদের কাছে ০.২ হেক্টরেরও কম অবশিষ্ট রয়েছে। মূলত, কৃষিজমি জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, বা কৃষি ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখনও আমাদের উত্পাদন ইনপুটগুলি অদক্ষভাবে ব্যবহার করছি।
ক্যালোরি চ্যালেঞ্জ (The calories challenge)
৫০ এর দশকে, যখন বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল প্রায় তিন বিলিয়ন, তখন শিল্পোন্নত বিশ্বে গড় ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ ছিল দিনে ২০০০ এর কিছু বেশি। প্রকৃতপক্ষে, বেশিরভাগ জনসংখ্যা কারখানা এবং ক্ষেতে কাজ করত এবং শারীরিক কাজ করার জন্য ক্যালোরি পুড়ত।
আজ, আমরা ৮ বিলিয়ন, এবং অর্থনীতি উত্পাদন এবং কৃষি থেকে পরিষেবাতে (service sector) স্থানান্তরিত হয়েছে। আমরা বলতে পারি যে জিডিপির ৭৫ শতাংশ ডেস্কে তৈরি হয়। সুতরাং, আজকাল পরিষেবা অর্থনীতি (service economy) -তে কম কায়িক পরিশ্রমের চাকরির জন্য আমাদের কম ক্যালোরি খরচ আশা করা উচিত, তবে এটি এমন হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাপী, গড় দৈনিক গ্রহণ (average daily consumption) ২৭৫০ ক্যালোরিতে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন ক্যালোরির চাহিদা তৈরি করে। ২০৩০ সালে, গড়ে জনপ্রতি দিনে ৩০৫০ ক্যালোরি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং জনসংখ্যা ইতোমধ্যে অষ্টম বিলিয়ন অতিক্রম করেছে।
FAO-এর মতে, গড় ন্যূনতম দৈনিক শক্তির প্রয়োজন জনপ্রতি প্রায় ১৮০০ ক্যালোরি, এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য আমাদের ১১০ শতাংশ বেশি সিরিয়াল, ১৩৫ শতাংশ বেশি মাংস এবং ১৪০ শতাংশ বেশি সয়াবিনের প্রয়োজন হবে। যা উৎপাদনে আবাদি জমির দ্বিগুণেরও বেশি প্রয়োজন হবে। আশ্চর্যের বিষয় নয়, OECD দেশ এবং নন-OECD দেশগুলির মধ্যে ক্যালোরি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিস্তৃত ব্যবধান রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু প্রতিদিন গড় গ্রহণ ৩৮০০ ক্যালোরি । এটি সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণের দেশ, অস্ট্রিয়া দ্বিতীয় এবং ইতালি তৃতীয়।
যখন আমরা খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করি, বিশ্ব জনসংখ্যাকে সঠিক পরিমাণে ক্যালোরি সরবরাহের হিসাব সামনে আসে।
খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কেবলমাত্র এই বুঝায় না যে কোনও অনাহারী মানুষ থাকবে না, এটি আরও বুঝায় যে উচ্চ-আয়ের দেশগুলির কম বা ভিন্নভাবে খাওয়া উচিত।
খাদ্য নিরাপত্তা আসলে, আসন্ন ১০ বিলিয়ন মানুষের জন্য ক্যালোরির একটি ন্যায্য বন্টন। উদীয়মান দেশগুলির প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ বৃহত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে একটি আধুনিক অর্থনীতিতে চলে যাচ্ছে যারা পুষ্টির জন্য আরও ব্যয়যোগ্য আয় পাচ্ছে, ফলে বিশ্বব্যাপী ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ অবধি, আমরা নিশ্চিতভাবে আশা করতে পারি না যে বিশ্ব খাদ্যের পরিবর্তন হবে না, কারণ আমাদের এক বিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত এবং এক বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত খাওয়ায় (overeating) ভুগছে। সুতরাং, ভবিষ্যতের জন্য একটি অপরিবর্তিত ডায়েট প্যাটার্ন, প্রত্যাশিত বা প্রতিশ্রুতিশীল নয়। উদীয়মান দেশগুলি এখনও সমস্ত জনসংখ্যার দৈনিক খাবার নিশ্চিত করার জন্য তাদের পথ তৈরি করছে।
ধনী দেশগুলিতে প্রায় ৪০-বছর-দীর্ঘ ভোজের পরে, সম্ভবত পুষ্টিজনিত রোগ এবং মানুষের খাওয়ার ধরণ, প্রানিজ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ হ্রাস বিষয়ে পুনর্বিবেচনা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচনে সচেতনতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যাইহোক খাদ্য নিরাপত্তার পথে ফ্যাশনেবল স্বাস্থ্যকর খাদ্যের চেয়ে একটি বাস্তব পরিবর্তন বেশি প্রয়োজন হবে, যা আজ ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন।
আয় বৃদ্ধি (Income growth)
কৃষি ব্যবসা ও কৃষি ব্যবস্থাপনার আরও একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা আমাদের বিশ্বকে বোঝার উপায় পরিবর্তন করছে এবং বিশ্বব্যাপী কৃষির ভবিষ্যত প্রভাবিত করছে।
ক্যালোরি কনজাম্পশন এবং খাবারের গুণমান সরাসরি আয়ের প্রাপ্যতার সাথে সম্পর্কিত।
যখন আয় বৃদ্ধি পায়, তখন খাদ্যের ব্যবহার কেবল পরিমাণে নয়, বিশেষ করে গুণমানেও পরিবর্তন হয়।
এই চ্যালেঞ্জ বোঝার জন্য, আমাদের প্রায় ১০,০০০ বছর আগে ফ্ল্যাশব্যাক করতে হবে। সেই সময়ে, কৃষি ও পশুপালন প্রবর্তনের ঠিক আগে, শিকারী, সংগ্রহকারী, যাযাবর গোষ্ঠী কয়েকটি প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রাণীর প্রোটিন বিশেষ করে বিরল অনুষ্ঠানে বছরে দুই বা তিনবার খাওয়া হত। সেই সময়ে, প্রানিজ প্রোটিন মুদি দোকানে রেফ্রিজারেটেড শেলফে প্রদর্শিত হত না। পরিবর্তে তারা ছিল চলন্ত এবং তাদের ধরার জন্য মানুষকে ভাল শিকারী হতে হত।
প্রায় ৩০০,০০০ বছর আগে শুরু হওয়া মানব ইতিহাসে গত ১০,০০০ বছর যেন চোখের পলকে কেটে গেছে। এত দ্রুত যে মানুষ এখনও প্রোটিনের জন্য এই পূর্বপুরুষের ক্ষুধা অনুভব করছে। প্রানিজ প্রোটিন আসলে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি প্রক্সি সূচক।
ব্যয়যোগ্য আয় যত বেশি হবে, প্রাণীজ প্রোটিনের ব্যবহার তত বেশি হবে এবং এই খরচ একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরণ করে। এটি মাছ এবং সিরিয়াল থেকে মাংসে চলে যাচ্ছে। প্রথমে পোল্ট্রি, তারপর শুয়োরের মাংস এবং লাল মাংস।
OECD দেশগুলির খাদ্যাভ্যাস বেশ বৈচিত্র্যময়, মাংসে সমৃদ্ধ এবং এটি দীর্ঘকাল ধরে চলমান৷ পরিবর্তে OECD-বহির্ভূত দেশগুলির খাদ্যাভ্যাস বিকশিত হচ্ছে৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অনেক দেশে খাদ্যাভ্যাস পশ্চিমা মডেলের দিকে যাচ্ছে। নগরায়ন এবং আয় বৃদ্ধির সাথে মাংস এবং ক্যালোরি চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রোটিনের বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য গবাদি পশু পালনের জন্য প্রচুর পরিমাণে আধুনিক এবং দক্ষ কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং শক্তি সম্পদের প্রয়োজন।
শিল্প বিকাশের সময়ে, কর্মশক্তি manufacturing এবং পরিষেবার দিকে আকৃষ্ট হয় এবং কৃষি পরিত্যক্ত হয়। ক্ষেতে খাদ্য পাওয়া যায় না এবং তার পরিবর্তে উৎপাদন করা হয়। পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে বহিরাগত উত্স থেকে সম্পদগুলি খুঁজে পাওয়া যায়।
গত কয়েক দশক ধরে চীন কী আমদানি করেছে? ক্রমবর্ধমান গবাদি পশু পালনের জন্য বেশিরভাগই উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সয়াবিন, ভুট্টা এবং গম আমদানি করেছে। সয়াবিন কেন? সয়াতে উচ্চ প্রোটিন উপাদান রয়েছে যা শূকর এবং গরুর মতো প্রাণীগুলি দ্রুত মাংসে রূপান্তরিত করতে পারে, জবাইয়ের ওজন (slaughtering weight) অনেক দ্রুত পৌঁছে যায়। চীনের জন্য অন্য দুটি বৃহত্তর আমদানি হল উল এবং তুলা, সম্ভবত আংশিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ থেকে গার্মেন্টস আউটসোর্স উৎপাদনের কারণে, কিন্তু আয় বৃদ্ধির সাথে জনসংখ্যার পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির কারণেও।
সুতরাং, অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নের স্তর অনুসারে, বাণিজ্য প্রবাহ একটি দেশ থেকে অন্য দেশে সুইং হয়।
উত্তর আমেরিকা একটি নিট পণ্য রপ্তানিকারক এবং দক্ষিণ আমেরিকাও তাই। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান নিট আমদানিকারক।
চীন মার্কিন সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল, কিন্তু সম্প্রতি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের আমদানি ভারসাম্যহীন করছে।
শক্তি খরচের ধরণ ছেড়ে দিলেও, খাদ্য এবং ফাইবার ব্যবহারের ধরণে গড় মজুরির প্রভাব বিবেচনা করে, কৃষি ব্যবসায় খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করার জন্য আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
বিশ্ব প্রোটিন-নিবিড় খাদ্যের (protein-intensive diet) দিকে অধিক হারে ঝুকে যাচ্ছে? আমরা এই প্রানিজ প্রোটিনের চাহিদা কিভাবে পূরণ করব? না কি আমরা কম সম্পদ ব্যবহার করে এই জাতীয় প্রোটিন এবং ক্যালোরি সরবরাহ করতে সক্ষম হব?
জলবায়ু পরিবর্তন
অনেক কৃষি বিজ্ঞানী তাদের প্রকল্প বিশ্লষণে এমন আশাবাদীভাবে অনুমান করেন যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিস্থিতি স্থির থাকবে, যা বোঝায় যে আমরা আজ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করতে সক্ষম হব।
তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞের মতে, এটি এমন হবে না এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে জলবায়ুর উপর বহুবিধ প্রভাবের সাথে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রায় চার থেকে ছয় ডিগ্রি বাড়তে পারে। এই ক্ষেত্রে, খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য চাহিদার মধ্যে ব্যবধান হতে পারে মাথাপিছু দিনে প্রায় ১৩০০ ক্যালোরি। অন্য কথায়, আমরা বিশ্বকে খাওয়াতে সক্ষম হব না। কৃষি ব্যবসা ও কৃষি ব্যবস্থাপনা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
Leave A Comment