শতায়ু হতে চান? হাত তুলুন। দেখি কার কার সাহস আছে?

আমি ২ হাত তুলেছি।

বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু

আমার যত দূর মনে পড়ে এক সময় পড়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৩৬ বছর। তার আগে হয়তো আরও কম ছিল। কয়েক বছর আগে চমকে গেলাম যখন দেখলাম সংখ্যাটি জাস্ট উল্টে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৬৩ বছর। আর এখন ৭৩ বছর। অনেকেই মানুষের গড় আয়ুর এই দ্রুত বর্ধন আত্মস্থ করতে পারছেন না। না পারাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি আত্মস্থ করতে বা ধাতস্থ হতে পারলেন কিনা তাতে কিছু যায় আসে না। যা ঘটার তা ঘটে চলছে।

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর চার্ট

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর চার্ট

একবার ভাবুনতো, এই ৭৩ বছর গড়ের ভিতর আছে শিশু মৃত্যু, অকাল মৃত্যু যে গুলি গড়কে নিচের দিকে নামিয়ে নিতে সক্রিয়। এই শিশু মৃত্যু, অকাল মৃত্যু অতিক্রম করে গড়টিকে ৭৩-এ স্থির রাখতেও ৮০, ৯০, ১০০ বছর বেঁচে থাকতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। এই গড় কি স্থির থাকবে? নিশ্চয়ই নয়। আমরা যারা এখন বেঁচে আছি তাদের অধিকাংশের জীবদ্দশায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর ছাড়িয়ে যাবে। তখন আমাদের ভিতর অনেকের উপর ১২০ বছর পর্যন্ত বা তারও অধিক বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার দায় চাপতে পারে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু

২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু

২০৫০ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর প্রক্ষেপণ

২০৫০ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর প্রক্ষেপণ

 

 

 

 

 

 

আমার মত ৫০ পেরনো যে বড় কুটুমরা ভয়ে হাত না তুলে পার পেয়ে যাবেন ভেবেছেন তাদের অনেককেই আরও ৭০ বছর জীবনের ঘানি টানতে হতে পারে। অতএব, লাইনে আসেন, মানসিকতা পাল্টান।

মধ্য বয়স

আমাকে যারা বৃদ্ধ অভিধায় বাতিলের খাতায় সুপারিশ করেন তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রেখে বিনয়ের সাথে নিবেদন করতে চাই ঈশ্বর চাহেনতো আমি কেবল মধ্য বয়স অতিক্রম করছি। দুরভাগ্যবশতঃ যে লোকটি ৩০ বছর বয়সে মারা যায় তার মাঝ বয়স ১৫ বছর, তিনি  যদি ৬০ বছর বাঁচতেন তাহলে ৩০ বছর হত তার মাঝ বয়স। আর যিনি শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ১২০ বছর বাঁচবেন মাত্র ৬০ বছরকে তাঁর মাঝ বয়স হিসাবে স্বীকার করতে হবে। অতএব, ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজনসহ আপামর জনগণের প্রতি আকুল আবেদন কাউকে বৃদ্ধ বলার আগে অন্তত ১২০ বারের বেশি ভাবুন।

আমার অধিদপ্তরে অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাকে দেখেছি ৩-৪ বছর চাকরি থাকতেই হাত গুটিয়ে ফেলেছেন। নতুন কোন উদ্যোগ বা পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করাতো দূরের কথা অনুমোদনের সই করতেও তাদের হাত কেঁপেছে, কলম ওঠেনি। অথচ সেই উদ্যোগের সুফল তারা ভোগ করে গেছেন, কেউ কেউ চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও ভুতাপেক্ষভাবে সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছেন যার উদ্যোগ তিনি নেননি বা সচেতনভাবে বিলম্বিত করেছেন।

অবসর

যারা চুলে পাক দেখা দিলেই বয়স শেষ বলে মনে মনে কবরের দিকে পা বাড়িয়ে রাখেন আল্লাহর রহমতে তাদের ওই ভীতসন্ত্রস্ত পদে সেই বয়সের সম পরিমান আরেক জীবনকাল এই পৃথীবিতেই হাঁটা লাগতে পারে। চাকরি থেকে অবসরকে যারা জীবন থেকে অবসর মনে করেন তাদেরকে হয়তো আরও ৫৯ বছর এই ধরা ধামে কর্মহীন নরাধমের মত জীবন কাটাতে হতে পারে। আমার পরামর্শ সকলের চাকরি অবসানে সম দৈর্ঘের আরেকটি কর্মময় জীবনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়া উচিত। না হলে আপনাদের এই নিষ্কর্ম জীবনের আরাম-আয়েশ-খোরাকের বোঝা বইতে অন্যদের কষ্ট হবে। ষাটোর্ধ মানুষের সংখ্যা অতি দ্রুত বাড়ছে।

অবসোত্তর জীবন

প্রফেসর ড. নীতিশ দেবনাথ

প্রফেসর ড. নীতিশ দেবনাথ

যারা ৫৯এ নেতিয়ে পড়েন তাদের বলব দেখুন ভেটেরিনারি পেশার কিংবদন্তি সিবাসু’র প্রাক্তন ভিসি ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ ৬৯ বছর বয়সেও শুধু বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ভেটেরিনারি সেবার উন্নয়নের সমস্ত ক্ষেত্রে শুধু পদচারণা নয় তারুণ্যের তেজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্যার, আমরা আপনার সাদা চুলের দ্যূতিময় তারুণ্যের শতবর্ষ পালনের মঞ্চে উদ্যাম নৃত্য করব।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাঃ সালাউদ্দিন খান স্যার প্রায় পনের বছর আগে সরকারী চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এবছরও তিনি এনএটিপি প্রকল্পে কাজ করেছেন। এই প্রকল্পের করমকর্তাদের তিনি তার সাদা চুল পাকা দাড়ি নিয়ে পিছন থেকে দাবড়াননি, বরং সবার সামনে থেকে সবাইকে চরকির মত ঘুরিয়েছেন। স্যারের প্রাণচাঞ্চল্য আর কর্মব্যস্ততা সত্যিই ঈর্ষনীয়। স্যার আপনার সাথে তাল মেলাতে যাদের নাভিশ্বাস উঠেছে তারা আপনাকে অভিশাপ দেবে শত বর্ষ বয়স না পেরনো পর্যন্ত যেন আপনার শ্বাস বন্ধ না হয়। আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করি আপনি শত বর্ষ পেরিয়ে যত দিন খুশি ফুর্তির সাথে বাঁচুন।

শেষ বয়সের একাকীত্ব

একজন মানুষ ৩, ৪, ৫, ৬ এমনকি ৭ দশক বয়সেও যদি জীবনসঙ্গী হারিয়ে একা হয়ে যান তাদেরকে যারা ‘’এই বয়সে আবার কেন?” বলে তাকে একা থাকতে অনুপ্রাণিত করেন, উৎসাহিত করেন প্রকান্তরে একা থাকতে বাধ্য করেন তারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, এই লোকটি আপনাদের কুপ্ররোচনায় একা থাকার মাহাত্য লাভের প্রলোভনে তার যাপিত জীবনের পরবর্তী সম পরিমান, কখনও দ্বিগুণ, এমনকি তৃগুণ বয়স শারীরিক মানসিকভাবে একাকীত্বের অভিশাপে জ্বলতে থাকবেন; আর আপনারা  আপনাদের ঠুনকো পারিবারিক মর্যাদা, মান সম্মান, কুপমন্ডুক চিন্তা চেতনা আর কুৎসিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মহানন্দে যুগল জীবন উপভোগ করবেন।

আজ যারা তার আত্মোৎসর্গের সমস্ত অমিয় সুধা চেটে পুটে লুটে খাচ্ছেন আর বলছেন আমরা তো তাকে ঘিরেই আছি , সে কেন একা হতে যাবে, সে কেন স্বার্থপরের মত নিজেকে একা মনে করবে? স্বার্থ ফুরালে চিনির দানার পাশে ঘিরে থাকা পিঁপড়ের মত সবাই একদিন তার পাশ থেকে সরে যাবেন।

যার বয়স যাই হোক, প্রেমে বয়স ষোল

যার বয়স যাই হোক, প্রেমে বয়স ষোল

কাউকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত করা পাপ। কিছু মানুষ মহত্ত্বের লোভে নিজেকে ব্যক্তিগত সুখ, সুবিধা, আসা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন, আবেগ, অনুভূতি সব কিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন।  যিনি মহত্ত্বের লোভে নিজেকে উৎসর্গ করছেন তিনি জেনে রাখুন –  স্নেহ, মমতা, ভালবাসা পারস্পরিক। একতরফা সেক্রিফাইস। নিজেকে বঞ্চিত করার নাম সেক্রিফাইস যা আসলে আত্ম বঞ্চনা, আত্ম প্রবঞ্চনা। সেক্রিফাইসের মোড়কে আত্ম প্রবঞ্চনা মতাপাপ।

দেখা যায় শতায়ুর মহা সড়ক

কয়েকদিন আগে আমার দুটি নিকট পরিবারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি।

১মটিঃ ১৭-১০-২০২৩ তারিখে আমার এককালের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা বন্ধু বড়ভাই গোপালগঞ্জের নাজমুল ইসলামের শ্বাশুড়ি ৯৪ বছর বয়সে মারা যান (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাহি রাজেউন)। তিনি অসাধারণ বুদ্ধিমতি ও মানবিক মানুষ ছিলেন। নাজমুল ভাইকে বলব আপনার শ্বাশুড়ির সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রিয় ভাবিকে তিনি যেন শতায়ুকাল পর্যন্ত আমাদের প্রতি মানবিক স্নেহ প্রদানের সাহস যোগান।

লুৎফর স্যার ও তার ৯৭ বছর বয়সী পিতা

লুৎফর স্যার ও তার ৯৭ বছর বয়সী পিতা

২য়টিঃ আমার কর্মজীবনের শ্রদ্ধেয় স্যার জনাব লুৎফর রহমান খান ৩-৪ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। গত ১৮-১০-২০২৩ সালে তার শ্রদ্ধেয় পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তাঁর মৃত্যুর আগের ছবি দেখে বুঝা যায় তিনি তখনও কতটা সবল ও প্রানবন্ত ছিলেন। লুৎফর স্যারের জন্য সুস্থ সবল কর্মময় শতায়ু কামনা করি। স্যার, প্রস্তুত থাকেন।

 

সবাই সুস্থ সবল কর্মময় আনন্দমুখর শতায়ু লাভ করুক। আমিও যেন সংগে থাকি।

আরও পড়তে পারেন: খাদ্যের মান বলতে কি বুঝায়?