ডিম ও মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কোয়েল পালন করা হয়। জাপানে সর্বপ্রথম বন্য কোয়েলকে ঘরোয়া পাখি হিসাবে কোয়েল পালন করার উপায় আয়ত্ব হয়েছিল। এখনো জাপানে বাণিজ্যিক খামারে ব্যাপকভাবে কোয়েল পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মাংস ও ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখির খামার সমাদ্রিত।

কোয়েল পালন করা সাধারণভাবে সহজ, সৌখিন ও লাভজনক একটি ব্যবসা।

 

কোয়েল পালন কি লাভজনক?

কোয়েল পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না।

  • কোয়েলকে সহজেই পোষ মানানো যায়।
  • বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ ইত্যাদি জায়গাতেও কোয়েল পালন করা যায়।
  • গৃহপালিত পাখির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র এই পাখির আয়তন খুব বেশি নয়। তাই খুব অল্প জায়গায় কোয়েল পালন করা যায়।
  • বিষেজ্ঞদের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালন করার জন্য উপযোগি।
  • কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু।
  • কোয়েলের একটি ক্ষুদ্র ডিমে পর‌্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন বিদ্যমান।
  • ঢাকা শহরের বঙ্গবাজার এলাকার পোল্ট্রি মার্কেটে কোয়েলের ডিম, বাচ্চা এবং পরিণত বয়সের কোয়েল কিনতে পাওয়া যায়। এখান থেকে এগুলো সংগ্রহ করে ভাড়া বাসায় স্বল্প পরিসরেও কোয়েল পালন করা সম্ভব।
  • সাধারণত একটি ভাল জাতের কোয়েল বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তীর ৬ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। পাশাপাশি এই বয়সে তারা ডিম দেয়া শুরু করতে পারে।
  • অত্যন্ত কম পুঁজি নিয়ে খামার তৈরি করে কোয়েল পালন করা যায়।
  • আকার ক্ষুদ্র বলে কোয়েল পালন করার জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না। ছোট আকারের একটি খাঁচাতেই কোয়েল পালন করা যায়। একটি প্রমাণ সাইজের মুরগির জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয় সেই একই জায়গায় কমপক্ষে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়।
  • কোয়েলের রোগ ব্যাধি প্রায় হয় না বললেই চলে। যেহেতু কোয়েলের রোগ ব্যাধি কম হয় সুতরাং এদের জন্য বাড়তি চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজন হয় না।
  • খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি বাচ্চা কোয়েল ডিম দিয়ে থাকে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল ডিম প্রদান করে থাকে।
  • কোয়েলের জন্য বিশেষ কোন খাবার সরবরাহ করতে হয় না। এদের খাদ্য চাহিদা কম অথচ শারীরিক বাড় খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত বাড়তে পারে। দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদের শারীরিক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে।
  • কোয়েলের ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের হয়। এই বাচ্চা পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ।

কোয়েলের মাংসে চর্বির পরিমাণ খুব কম বলে যে কোন রোগীর পথ্য হিসেবে কোয়েলের মাংস ব্যবহৃত হতে পারে। কোয়েলের ডিম পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। এই কারণে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজন।

কোয়েলের জাত বা বংশ 

কোয়েলের জাত হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় জাপানি কোয়েলকে। কারণ, জাপানেই কোয়েলকে সর্বপ্রথম গৃহপালিত করা হয়েছে। কোয়েলের কয়েকটি জাত এবং উপাজত রয়েছে, সেগুলো নিম্নরূপ-

লেয়ার কোয়েলঃ

ডিম উৎপদানের জন্য কোয়েল পালন করলে লেয়ার জাতের কোয়েল পালন করতে হয়।  মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান। এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো – ফারাও, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন, ব্রিটিশ অরেঞ্জ ইত্যাদি।  শুধু ডিম উৎপাদনের জন্য এই জাতের কোয়েলপালন করা হয়ে থাকে।

লেয়ার কোয়েল

ব্রয়লার কোয়েলঃ

মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যে ব্রয়লার জাত বিদ্যমান। এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো -আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল, ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ইদ্যাদি। এই জাতের কায়েলকে শুধু মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

ব্রয়লার কোয়েল

 

কোয়েলের বাসস্থান ব্যবস্থাপনা

লিটার বা খাঁচায় উভয় পদ্ধতিতেই কোয়েল পালন করা যায়।

কোয়েল পালন

লিটারে কোয়েল পালন

তবে খাঁচায় সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।

কোয়েল পালন

খাঁচায় কোয়েল পালন

একটি খাঁচার ওপর আরেকটি খাঁচা এভাবে মোটামুটিভাবে অল্প জায়গাতে অনেকগুলো খাঁচা স্থাপন করে কোয়েল পালন করা যায়। মোটামুটিভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ থেকে ১০০ সিন্টিমিটার প্রস্থ এবং ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচায় কমপক্ষে ৬০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করা যায়। কোয়েলর খাঁচা তৈরীর জন্য তারের নেট ব্যবহার করা ভাল।

কোয়েলের খাঁচায় ব্যবহৃত নেটের ফাঁকগুলো একটু ঘন হতে হবে। যাতে করে কোয়েলের মুখ বা গলা সেই ফাঁক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে। প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েলর জন্য নেটের ফাঁকার পরিমাপ হবে ৫ মিমি x ৫ মিমি ।

সর্বোপরি বাচ্চা রাখার খাঁচাসহ পরিনত বয়সের কোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন ইঁদুর, ছুঁচো ইত্যাদি না ঢুকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাঁচার ফাঁক তৈরি করতে হবে।

কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থা তার খাঁচাতেই রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পানি বা খাবার রাখার পাত্র উল্টে যেন কোয়েলের গা ভিজে না যায়।

লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বৃষ্টির পানি বা অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা কোয়েলের খাঁচা ভিজে না যায়। ভেজা স্থান কোয়েলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক হুমকিস্বরূপ । খাবার পাত্র এবং পানি রাখার পাত্রগুলো মুরগির খামারের মতোই হবে; তবে সেগুলো আকারে ছোট হলেও অসুবিধা নেই।

কোয়েলের বাচ্চাকে ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। বাচ্চার বয়স ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিম উত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। মুরগির বাচ্চার মতো একই পদ্ধতিতে কোয়েলের বাচ্চাকে ব্রুডিং বা কৃত্রিম তাপ প্রদান করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে হিসেব করে দেখা গেছে ১০০টি মুরগির জন্য যে ধরনের ব্যাপক বাসস্থানের প্রয়োজন হয়-সেই ধরনের জায়গায় কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ কোয়েল পালন করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।

কোয়েলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

সাধারণভাবে একটি পূর্ণ বয়সের কোয়েল দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে। বাচ্চা কোয়েলের খাদ্যে ২৭% এবং প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েলের খাদ্যে ২২-২৪% প্রোটিন থাকা দরকার। কোয়েলের খাদ্যের প্রতি কেজিতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কিলোক্যালোরি বিপাকীয় শক্তি বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন। সাধারণভাবে হাঁস মুরগির যে খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে তার মধ্যেই এই ধরনের আমিষ এবং ক্যালোরি বিদ্যমান। সুতরাং হাঁস মুরগির খাবার প্রদান করে কোয়েল পালন করা যায়।

একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার খায়।

বয়স ভেদে কোয়েল পাখিকে সাধারণত ৩ ধরনের খাবার প্রদান করা হয়। স্টার্টার (১ – ২২ দিন), গ্রোয়ার (২৩ – ৫৬ দিন) ও লেয়ার (৫৭ দিনের বেশি)। আকারে ছোট হলেও এদের প্রোটিন চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

কোয়েল পাখির দৈহিক আকার ছোট হলেও এর ডিমের আকার তুলানামূলক বড়। তাই ক্যালসিয়াম, জিঙ্কের ও মিনারেলের চাহিদাও বেশি।

নিচে কোয়েলের খাবার তৈরির একটি আদর্শ তালিকা দেয়া হলো-

খাদ্য উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারলেয়ার
ভূট্টা৫২ কেজি৫৬ কেজি৫৬ কেজি
সয়াবিন মিল২৫ কেজি২২ কেজি১৮ কেজি
রাইচ পালিশ১০ কেজি১১.২ কেজি১০ কেজি
প্রোটিন ৬০%৮ কেজি৬ কেজি৫ কেজি
লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি১.৮ কেজি১০ কেজি
লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
সালমোনেলা কিলার২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৫০ গ্রাম
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
ডিএল- মিথিওনিন১২০ গ্রাম১১৫ গ্রাম১৩০ গ্রাম
এল-লাইসিন৯০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
খাবার সোডা১০০ গ্রাম১২৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম
কোলিন ক্লোরাইড৭০ গ্রাম৭০ গ্রাম৬০ গ্রাম
টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম
সয়াবিন তেল৫০০ গ্রাম২০০ গ্রাম
মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি

কোয়েল খুব ঘন ঘন পানি পান করে। তাই কোয়েলের খাঁচায় কয়েকটি স্থানে পানির ব্যবস্থা খাকতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্রগুলো যেন খাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে। যাতে পানির পাত্র উপচে বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গা ভিজে না যায়।

কোয়েলের রোগ বালাই ও স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা 

কোয়েলের রোগ ব্যাধি খুব কম হয়। তবে মাঝে মাঝে কোয়েলকে রোগক্রান্ত হতে দেখা যায়।

কোয়েল অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকে সুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হবে এবং উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অসুস্থ্য কোয়েলের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে পারে।
খাঁচায় কোন কোয়েল মারা গেলে সাথে সাথে তার কারণ অসুসন্ধান করতে হবে। মরা কোয়েল পুড়িয়ে বা পুতে পেলতে হবে।
কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যে আমাশয় উল্লেখ্যযোগ্য। এই রোগ হলে কোয়েলের ঘন ঘন পায়খানা হয়, খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয় পাশাপাশি কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াতে হবে।

সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন অথবা কৃমিনাশক ঔষধ দেয়া হয় না। তবে বাচ্চা ফুটার প্রথম ২ সপ্তাহ সতর্কতার সাথে কোয়েলের বাচ্চার যত্ন নিতে হয়। বাচ্চা অবস্থায় অব্যবস্থাপনার কারণে কোয়েলের বাচ্চা মারা যায়। তবে, বয়স্ক কোয়েলের মৃত্যুহার খুবই কম।

 ব্রুডার নিউমোনিয়া

আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাচ্চা কোয়েলের মৃত্যু হতে পারে, যদি না ব্রুডারে থাকাকালীন তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়৷ তাই ব্রুডিং করার সময় অর্থাৎ প্রথম দুই সপ্তাহ বাচ্চা কোয়েলকে নজরে রাখতে হবে৷ কারণ ঐ সময় আসপারজিলাস ফিউমিগেটাস নামক ছত্রাকের প্রভাবে এই ব্রুডার নিউমোনিয়া হয় ।

রোগের লক্ষণঃ

বাচ্চা কোয়েল ঝিমিয়ে পড়ে, দুর্বল হয়ে পড়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে৷ চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ থেকে রস বেরোতে থাকে৷ এই রোগে মৃত্যুর হার শতকরা ২- ৩ ভাগ৷ কিন্তু আক্রান্তের হার শতকরা ৫০ ভাগ৷

চিকিৎসাঃ

২ গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রোপিওনেট ১০০ কেজি খাবারের সাথে মেশাতে হবে৷ উপজেলার ভেটেরিনারি র্সাজনের পরামর্শ মত আন্টিবায়টিক খাওয়াতে হবে৷

কোয়েলের ডিমের পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা

আমাদের দেশে ইদানিং কোয়েলের ডিমের বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। গড়ে উঠছে অনেক কোয়েল পাখির খামার। তাই এ ডিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারের কথা জানা থাকা দরকার।

কোয়েল পাখির ডিমের ওজন সাধারণতঃ ৯ গ্রাম হয়ে থাকে।একটি মুরগির ডিম ৫০-৫৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তাই পরিমাণের দিক দিয়ে ৫ – ৬ টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমান। আসুন জেনে নিই একটি কোয়েলের ডিমে কতটা পুষ্টি উপাদান থাকে।

কোয়েলের ডিম

কোয়েলের ডিমের পুষ্টিগুণ

ক্যালরিঃ ১৪
ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ৪ মিলিগ্রাম
ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডঃ ৮৪ মিলিগ্রাম
প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম
কোলেস্টেরলঃ ৭৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন এঃ ১%
রিবোফ্লাভিনঃ ৪%
ভিটামিন বি১২ঃ ২%
প্যানথোনিক এসিডঃ ২%
আয়রনঃ ২%
সেলেনিয়ামঃ ৪%
ফসসরাসঃ ২%

কোয়েলের ডিমে তার আনুপাতিক হারে অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। কোয়েল পাখির একটি ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে!  কোয়েলের ডিমে ভিটামিন ও খণিজ লবন পরিমাণে কম মনে হলেও সমপরিমাণ মুরগির ডিমের তুলনায় তা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ৫টি কোয়েলের ডিমে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

তবে কোয়েলের ডিমে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে। কোয়েলের ডিমে ৭৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল থাকে, যা আমাদের দৈনিক চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ! তাই যাদের রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি, তাদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।তবে এ ডিমে প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান, যা শরীরের পক্ষে উপকারী।

সর্বোপরি, কোয়েলের ডিম সুদৃশ্য, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই এটি পুষ্টিবিদ ও পুষ্টির ব্যাপারে আগ্রহী মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য গুনাগুণ

১। শক্তি বর্ধক

কোয়েল পাখির ডিম মানুষের শরীরের জন্য বেশ ভালো একটি শক্তির উৎস। এই ডিম প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ, যা শরীরের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোয়েলের ডিমের অ্যামিনো এসিড প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান। শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে এদের মধ্যে কয়েকটি অ্যামিনো এসিড খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অন্য কয়েকটি অ্যামিনো এসিড টিস্যুর ক্ষয়রোধ ও নতুন টিস্যু তৈরি  করে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিমে লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড আছে যা শরীরে অ্যান্টিবডি এবং হরমোন, কোলাজেন ও এনজাইম উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। নতুন রক্ত তৈরিতে আয়রনের ভূমিকা রয়েছে। আয়রনের অভাবে শরীরে অ্যানেমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়, যার ফলে ক্লান্তি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা দেখা যায়।

২। ক্যান্সার প্রতিরোধক

কোয়েলের ডিমে প্রাপ্ত খণিজ উপাদানগুলোর সেলেনিয়াম অন্যতম। সেলেনিয়াম প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সেলেনিয়ামে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রপার্টি যা আমাদের দেহকোষকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া ও অধিক জারণ থেকে রক্ষা করে। এইচ আই ভি ও ক্রন’স ডিজিজ আক্রান্ত মানুষের দেহে সেলেনিয়ামের অভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সেলেনিয়ামযুক্ত খাদ্য রাখাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। সেক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম একটি উত্তম পছন্দ হতে পারে।

৩। যকৃত, ত্বক, চুল ও চোখের সুরক্ষা

রিবোফ্লাভিন (মূলত ভিটামিন বি ২ নামে পরিচিত) দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই দরকারী। ভিটামিন বি ২ সহ অন্যান্য বি শ্রেণীর ভিটামিন আমাদের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা রক্ষা করে। শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে রিবোফ্লাভিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোয়েলের ডিমে আকারের অনুপাতে রিবোফ্লাভিনের পরিমান বেশি। নিয়মিত একের অধিক কোয়েলের ডিম খেলে তা লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট!

৪। মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করা

মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি১২, থায়ামিন (ভিটামিন বি১) ও ভিটামিন বি২ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আমাদের স্মৃতিশক্তির ক্ষয় রোধ করে। কোয়েলের ডিম ভিটামিন বি১২ এবং রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২) এর একটি উত্তম উৎস। এতে কিছু পরিমাণ থাইমিনও (ভিটামিন বি১) বিদ্যমান থাকে।

আরও পড়তে পারেনঃ কবুতর পালন