Table of Contents
ছাগলের বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
ছাগলের বাসস্থান নির্মানে বিবেচ্য বিষয়সমুহ
ছাগলের বাসস্থান শুষ্ক ও উঁচু স্থানে নির্মান করা উত্তম।
ঘরে আলোবাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
ঘরের মেঝে সব সময় শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ছাগলের ঘর পূর্ব পশ্চিমে লম্বা লম্বি এবং দক্ষিণ দিকে খোলা থাকা ভাল।
ছাগল খামারে যে সমস্ত ঘর থাকা প্রয়োজন
পারিবারিক পদ্ধতিতে মুক্তভাবে খুব অল্প সংখ্যক ছাগল পালন করলে ছাগলের বাসস্থান ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা ঘরের তেমন প্রয়োজন হয় না। মানুষের থাকার ঘরের এক পাশে, ঘরের পাশের বারান্দায় অথবা গোয়াল ঘরের গরুর সাথে ছাগলের বাসস্থান ব্যবস্থা করা যায়।
আধা নিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতিতে বানিজিজ্যকভাবে একসাথে অনেক ছাগল পালন করা হয় বলে ছাগলের জন্য আলাদা করে বিভিন্ন ঘর তৈরি করা দরকার হয়।
একটি বানিজ্যক ছাগল খামারে নিম্ন বর্ণিত আলাদা আলাদা ঘর থাকা প্রয়োজন –
- প্রজনন উপযোগী ও দুগ্ধবতী ছাগলের ঘর
- ব্রুডিং পেন
- বাচ্চা ছাগলের ঘর (দুধ ছাড়ানোর আগ পর্যন্ত)
- মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের (খাসী ও প্রজনন ছাটাইকৃত ছাগী) ঘর।
- পাঁঠার ঘর
- আইসোলেশন সেড (অসুস্থ্য ছাগলের জন্য)
- কোয়ারেন্টাইন শেড (নতুন ক্রয়কৃত ছাগলের জন্য – ক্রয়ের পর ২ সপ্তাহ পর্যন্ত এ ঘরে আলাদা করে রখতে হয়। নতুন ছাগল এনেই পালের পুরাতন ছাগলের সাথে মিশানো যাবে না)।
- দানাদার খাদ্য সংরক্ষণের ঘর
- সবুজ ঘাস ও রাফেজ জাতীয় খাদ্য রাখার ঘর।
পালন পদ্ধতি অনুসারে ছাগলের ঘরের শ্রণি-বিন্যাসঃ
পালন পদ্ধতি অনুসারে ছাগলের বাসস্থান দু’ভাবে শ্রেণি বিভাগ করা যয়েতে পারেঃ
ক) মেঝে পদ্ধতির ঘর- এ ধরণের ঘরে ছাগলকে মেঝেতে পালন করা হয়।
খ) মাচা পদ্ধতির ঘর- এ ধরণের ঘরে মেঝের উপর মাচা তৈরি করে তার উপর ছাগল পালন করা হয়।
নির্মান উপকরণের উপর ভিত্তি করে মেঝে পদ্ধতির ঘর ৩ প্রকার হতে পারে –
১) কাঁচা মেঝের ঘর,
২) অর্ধ-পাকা মেঝের ঘর এবং
৩) পাকা মেঝের ঘর।
সেমি ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলের ঘরের স্থান নির্বাচনঃ
লাভজনকভাবে ছাগলের খামার করতে হলে ছাগলের জন্য পরিস্কার, শুষ্ক, দুর্গন্ধমুক্ত, উষ্ণ, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের পরিবেশ রয়েছে এমন আবাসন প্রয়োজন। ছাগলের বাসস্থান অপরিস্কার, স্যাঁতস্যাঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে হলে ছাগলের বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে। ফলে দৈহিক ওজন বৃদ্ধির হার, দুধ প্রদানের পরিমান এবং বাচ্চা উৎপাদনের হার কমে যায়।
সেমি ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলের বাসস্থান নির্মানঃ
আয়তনঃ সেমি ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলকে সাধারনতঃ ১৪-১৬ ঘন্টা সময় ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে হয়। এজন্য এ পদ্ধতিতে একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের জন্য ৮-৯ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ১৬ফুট X ১২ফুট ঘরে ২৪টি বয়স্ক ছাগল রাখা যায়। প্রতিটি বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৫-৭ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়।
ঘরের ধরণঃ সেমি ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে পালনের জন্য ছাগলের ঘর ছন, গোলপাতা, খড়, টিন বা ইটের তৈরি হতে পারে। ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরি করে তার উপর ছাগল রাখা যায়। মাচা প্লাস্টিকেরও হতে পারে। মাচার উচ্চতা ৫ফুট হবে এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা হবে ৮ ফুট। গোবর ও প্রস্রাব পড়ার সুবিধার্থে মাচার মেঝেতে বাঁশের চটা বা কাঠকে ১ ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে হবে। শীতের সময় মাচার উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে।
বাস ঘরের বিন্যাসঃ বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন ধরণের ছাগলকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রাখা উচিৎ। পাঁঠাকে সব সময় ছাগী হতে পৃথক রাখা উচিৎ। দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও শুষ্ক ছাগীকে একসাথে রাখা যেতে পারে। ছাগল ছানাকে ১ মাস বয়স পর্যন্ত মা ছাগীর সাথে রাখা উচিৎ। বাড়ন্ত ছাগল ও খাসীকে একসাথে রাথা যেতে পারে তবে তাদেরকে পৃথকভাবে খাওয়াতে হবে।
ব্রুডিং পেনঃ বাঁশের খাঁচা বা কাঠের খাঁচাকে ব্রুডিং পেন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর চার পাশ ছালা বা চটের বস্তা দিয়ে ঢাকা থাকবে। খাঁচার মেঝেতে ৪-৫ ইঞ্চি পুরু খড় বিছানো থাকবে। ৬০X৫৬X৬০ ঘন সেন্টিমিটার আয়তনের ব্রুডিং পেনে ২টি ছাগীসহ ৪-৬টি বাচ্চা রাখা যায়।
তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে খাঁচা প্রতি ১টি ১০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়ে তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগলের খাদ্যাভ্যাস
ছাগল একটি রোমন্থক প্রাণী। ছাগল সেলুলোজ বা আঁশ জাতীয় খাবার হজম করতে পারে। এছাড়া ছাগল সংকটকালে নাইট্রোজেন ও পানি অধিকতর ভালভাবে শরীরের কাজে লাগাতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খাদ্যের অভাব হলে ছাগল অত্যন্ত নিম্ন পুষ্টিমানযুক্ত খাদ্য খেতে পারে যা সচরাচর অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণি খায় না। ছাগল সাধারণতঃ কাঁঠাল, আম, কলা, গামারী,মেহগিনি, বট, বরই, ভুট্টা সূর্যমুখী প্রভৃতি গাছের পাতা খায়। এছাড়া রাস্তা ঘাটের দূর্বা ঘাস, লতা, গুল্ম, কাটা-ঝোপ এবং বাড়ির শাক-সব্জি ও ফলমূলের খোসা ও উচ্ছিষ্টাংশ খেয়ে ছাগল তার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
ছাগলকে সুস্থ্য সবল রাখতে হলে এবং অধিক উৎপাদন পেতে হলে একে নিয়মিত সুসম খাদ্য খাওয়ানো উচিৎ। অধিক দুধ ও মাংস এবং উন্নতমানের চামড়া উৎপাদনের জন্য ছাগলকে সম্পূরক দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
বাড়ন্ত ছাগলের দৈনিক খাদ্য সরবরাহের তালিকা
ছাগলের ওজন (কেজি) | দৈনিক দানাদার খাদ্য সরবরাহ (গ্রাম) | দৈনিক ঘাস (চরানোসহ) সরবরাহ (কেজি) |
৪ | ১০০ | ০.৪ |
৬ | ১৫০ | ০.৬ |
৮ | ২০০ | ০.৮ |
১০ | ২৫০ | ১.০ |
১২ | ৩০০ | ১.০ |
১৪ | ৩৫০ | ১.৫ |
> ১৮ | ৩৫০ | ২.০ |
বিভিন্ন ওজনের খাসীর দৈনিক খাদ্য সরবরাহের তালিকা
বয়স (মাস) | ওজন (কেজি) | ঘাস-পাতা (কেজি) | ইউরিয়া মিশ্রিত খড় (কেজি) | দানাদার খাদ্য (গ্রাম) | ভাতের মাড় (কেজি) |
৩ | ৬.০ | ০.৪০ | ০.০২ | ১০০ | ৪০০ |
৪ | ৭.৮ | ০.৪৫ | ০.০৫ | ২০০ | ৪০০ |
৫ | ৯.৬ | ০.৫০ | ০.০৫ | ২০০ | ৪০০ |
৬ | ১১.৫ | ০.৬০ | ০.১০ | ২৫০ | ৪০০ |
৭ | ১৩.২ | ০.৮০ | ০.১৫ | ২৫০ | ৪০০ |
৮ | ১৫.০ | ১.০০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
৯ | ১৬.৮ | ১.০০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১০ | ১৮.৬ | ১.২০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১১ | ২০.৫ | ১.৩০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১২ | ২২.২ | ১.৩০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১৩ | ২৪.০ | ১.৫০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১৪ | ২৫.৮ | ১.৬০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
১৫ | ২৬.৫ | ১.৮০ | ০.২০ | ৩০০ | ৪০০ |
দুগ্ধবতী ছাগীর দৈনিক খাদ্য সরবরাহের তালিকা
ছাগীর ওজন (কেজি) | দুধ উৎপাদনের পরিমান (কেজি) | দানাদার খাদ্য (গ্রাম) | ঘাস-পাতা (কেজি) | খড় (গ্রাম) | ভাতের মাড় (কেজি) |
২০ | ০.৫০ | ৩০০ | ১.৫ | – | ১.০ |
২৫ | ০.৮০ | ৪০০ | ১.৫ | – | ১.২ |
৩০ | ১.০০ | ৪০০ | ২.০ | ৩০০ | ১.৫ |
৩৫ | ১.০০ | ৪০০ | ২.৫ | ৫০০ | ২.০ |
৪০ | ১.০০ | ৪০০ | ২.৫ | ৬৫০ | ২.০ |
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়ানোঃ
ছাগল সাধারণতঃ তার ওজনের ৪-৫% হারে খেযে থাকে। এ খাদ্যের মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুড়া, ভূষি, চাল, ডাল, ছোলা ইত্যাদি) থাকতে হবে। একটি বাড়ন্ত খাসীকে দৈনিক ২০০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার প্রদান করতে হবে। ২ থেকে ৩ বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীকে দেনিক প্রায় ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাবার প্রদান করতে হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ২০০-৩০০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন।
ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ (%)
উপকরণ | শতকরা হার (%) |
গম / চাল / ভূট্টা ভাঙ্গা | ৩৫.০০ |
গমের ভূষি / আটা / কুড়া | ২৪.০০ |
খেসারী / মাসকলাই / অন্যান্য ডালের ভূষি | ১৬.০০ |
সয়াবিন / তিল / নারিকেল / সরিষা প্রভৃতির খৈল | ২০.০০ |
শুটকি মাছের গুড়া | ১.৫০ |
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট | ২.০০ |
লবন | ১.০০ |
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স | ০.৫০ |
মোট | ১০০ |
Leave A Comment