মাছের দাম, মুরগির দাম ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেলে আপনি কি করবেন? মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বন্ধ করে বা কমিয়ে দিবেন? তাহলে শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ হবে কিভাবে?
Table of Contents
ভূমিকাঃ
গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ রোজ শনিবার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে গিয়েছিলাম মাছ ও সব্জি কেনার জন্য। ওখানে একটু সাশ্রয়ে কেনা যাবে আশা নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখলাম কয়েকদিনের ব্যাবধানে সব্জির দাম কেজি প্রতি ২০-৪০ টাকা বেশি। আর মাছের দামও গত মাসের তুলনায় শতকরা প্রায় ২০ ভাগের অধিক এবং ছয় মাস আগের তুলনায় ৪০-৫০ ভাগ বেশি। সব্জি না কিনে কিছু মাছ কিনে চলে আসলাম।
আসার পথে চিন্তা করলাম আমি ভাল একটা চাকরী করি, আমিই দ্রব্য মূল্যের এই লাগামহীন উর্ধগতিতে তাল সামলাতে পারছিনা। এই বেটা রিকশাওয়ালা কিভাবে সংসার চালাচ্ছে? অনেকে ভাবতে পারেন রিকশাওয়ালারাও অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আমি আমার রিকশাওয়ালার বেশি খোঁজ খবর নিলাম না- শুধু বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম। তার বাড়ি আয়োডিনের ঘাটতি এলাকায়। যা ভেবেছিলাম তাই হল। আমাকে পৌছে দিয়ে সে পূর্বের ভাড়াই চাইল। নিজ থেকেই তাকে ২০ টাকা বেশি দিলাম।
সীমিত আয়ের মানুষ
বাসায় এসে মনে করলাম এই যে আমাদের মত সীমিত আয়ের মানুষের দ্রব্যমূল্য মোকাবেলায় করনীয় সম্পর্কে একটা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা দরকার। মনে হল সীমিত আয় (Limited Income) এর মানুষ বলাটা এখানে ঠিক হবে না। কারণ, সীমিত আয়ের মানুষ বলতে আমরা এখন অল্প আয়ের মানুষ বুঝতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। আমি তো অল্প আয়ের মানুষের ভিতরে পড়ি না। আমরা যারা অল্প হোক বা মাঝারি হোক কিন্তু Limited Income বলতে সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষ – মূলত আমি তাদের জন্য একটা লেখা লিখব।
সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষ
সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষ হল তারা যারা হুট-হাট কোন অজুহাতে নিজেদের আয় নিজেরা বাড়াতে পারেনা, যেমন- মহামারী, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধাবস্থা, রোজার মাস ইত্যাদি উপলক্ষ্যে নিজেদের কব্জায় থাকা পণ্য বা সেবার দাম বাড়িয়ে দেয়া, আয় বৃদ্ধির মওকা নিজের হাতে রেখে সময় মত তা হাওলা করা, স্বাক্ষরগুনে খাম নিয়ে বাড়ি ফেরা, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি (এর পরেরগুলি ভাসুর, নাম নেয়া যাবে না, তাই ইশায়ায় বুঝে নেন)।
যে ভাবা সেই কাজ। বসে গেলাম এক্সেল শীটে হিসাব নিকাশ কষতে। অংক কষা হয়ে গেলেও সময় গড়িয়ে আস্তে আস্তে রাত্রি গভীর, ঘুম, সকালে অফিস, অফিস ছুটির পর ক্লান্তিতে ভাষা সাজিয়ে লিখতে আগ্রহ হারি য়ে ফেলেছিলাম।
কিন্তু ওই যে সব্জি কেনা হয়নি! সব্জি কিনতে গিয়ে মাথায় বাই উঠে গেল আবার। বাই উঠবেই না কেন? গত বছর কাটা মিস্টি কুমড়া কিনেছি ২০-৩০ টাকা কেজি, কয়েকদিন আগে শেষবার কিনেছি ৩৮ টাকা কেজি , আজ সেটা এক লাফে হাফ সেঞ্চুরি (ছবি তুলে এনেছি – ছবি চেটে খাব), গত সপ্তাহেও যেখানে যে ঢেড়শ ৪০-৪৫ টাকা করে কিনেছি আজ সেখানে সেই লেডিস ফিঙ্গারের দাম ৮২ টাকা, হ্যাঁ, বিরাশি সিক্কা না; বিরাশি টাক্কা। সিদ্ধান্ত নিলাম লিখবই।
কিন্তু কি করা? মানুষ কি করবে? বিশেষ করে সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষ। না খেয়ে থাকবে? না।
ভোক্তা হিসাবে আমাদের যুক্তিশীল আচরণ করতে হবে। আসলে তা আমরা করি না। অর্থনীতির প্রতিটা সূত্রের অনুমিতি (Assumption) হচ্ছে অর্থনীতির প্রতিটি খেলোয়াড় যুক্তিশীল আচরণ করবে – তাহলেই সুত্রগুলি কার্যকর প্রতীয়মান হবে। যে করবে না সে অযোগ্য, হুমজিক্যালি সে ফাউল করে বসবে অথবা নির্বিবাদে পরাজয় স্বীকার করবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে করনীয় কি?
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে আমরা ছোটবেলায় মূর্খায়নের শুরুর দিকে যে ”দাম বাড়লে ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে খরচ ঠিক রাখা”র অংক শিখেছিলাম সেটি কাজে লাগাব? নিশ্চয়ই নয়? তা করলে আমাদের অভাব কাঙ্খিত মাত্রায় পূরণ হবে না।
তাহলে কি ব্যবহার ঠিক রেখে খরচ বাড়াব? কিন্তু আয় তো সীমাবদ্ধ। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেইতো ব্যয়যোগ্য আয় বাড়বে না। তাহলে?
প্রথমে বিকল্প দ্রব্য খুঁজতে হবে। বিকল্প বাছাই হল অর্থনীতির মূল ১০টি নীতির অন্যতম একটি নীতি। কিন্তু যদি সামগ্রীক মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায়? নগরে আগুন লাগলে তো দেবালয়ও রেহাই পায় না। বিকল্প দ্রব্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ও স্বপ্ন, এখন কি করব?
এখন বিকল্প দ্রব্যের সেট নিয়ে তার বিভিন্ন পরিমানের একটি ম্যাট্রিক্স তৈরি করে খুঁজে দেখতে হবে কোন সংমিশ্রনে (Combination) পরিবর্তিত মূল্যেও ব্যয় না বাড়িয়ে ভোগ স্থির রাখা যায়।
অত সোজা!! তত্ত্ব আওড়ানো আর বাস্তবতা মোকাবেলা করায় বিস্তর ফারাক। কয়জন মানুষ জটিল ম্যাট্রিক্স করে বাজার করতে পারবে?
মানুষ এটা নিজের অজান্তেই অনেক সময় করে। বিশেষ করে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তারা করে। তারা হিসাব করে কতটুকু পান্তায় কতটুকু নুন হলে খাওয়া যাবে। আমাদের মত তথাকথিত শিক্ষিত জনেরা খরচ বাড়ার অজুহাতে দুর্নীতির সাফাই গাই আর অসৎ উপায়ের সুযোগ নেই। কিন্তু যাদের সে সুযোগ নাই, তারা কি করে চলে?
নিচে আমি কয়েকটি অবস্থায় (Situation) ব্যয় না বাড়িয়ে ভোগ স্থির রাখার ম্যাট্রিক্সগুলি দেখানোর চেষ্টা করব।
মাছের দাম বৃদ্ধি পেলে করনীয় কি?
আমি কি করেছি সেটা বলি।
আমি মাছ বাজারে ইলিশ, চিংড়ি, নদীর রুই, কাৎলা, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস, বেলে, বড় বাইন, রুপচাঁদা, দেশি কৈ, শিং, মাগুর মাছের আঁচ নিতে পারিনা। আমার সীমাবদ্ধ আয়ের সাথে সংগতি রেখে বিভিন্ন প্রকার চাষের মাছ কিনি। চাষ করা মাছ খাই না বলে নাক সিটকানোর মত উঁচু নাক আমার নাই।
গতকাল ভেবেছিলাম শিং, কৈ, পাবদা, রুই আর তেলাপিয়া মাছ (সব চাষের) কিনব। কিন্তু উপরে বলেছি যে, সব মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমার কোন মাছ কি পরিমান কিনব সে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছে। আমি সেই পরিবর্তনের একটা অংক বাসায় এসে কষেছি। দেখেন আমার উপরে বলা তত্ত্বের সাথে মিলে কি না?
টেবিলঃ কয়েকটি মাছের পূর্বের দাম ও বর্তমান দামের তুলনা
মাছের নাম | পরিমান | পূর্বের মূল্য | বর্তমান মূল্য | মন্তব্য | ||
একক মূল্য | মোট মূল্য | একক মূল্য | মোট মূল্য | বৃদ্ধির হার | ||
চাষের শিং | ১ | ৪০০ | ৪০০ | ৫৫০ | ৫৫০ | ৩৮.৭৫% |
চাষের কৈ | ২ | ১৫৫ | ৩১০ | ২৪০ | ৪৮০ | ৫৪.৮৪% |
চাষের তেলাপিয়া | ২ | ১৬০ | ৩২০ | ২৫০ | ৫০০ | ৫৬.২৫% |
চাষের পাবদা | ১ | ৩৭০ | ৩৭০ | ৫২৫ | ৫২৫ | ৪১.৮৯% |
চাষের রুই | ১.৫ | ২৪০ | ৩৬০ | ৩২০ | ৪৮০ | ৩৩.৩৩% |
চাষের পাঙ্গাস | ০ | ১৫০ | ০ | ২০০ | ০ | ৩৩.৩৩% |
মোট | ৭.৫ | ১৭৬০ | ২৫৩৫ | ৪৪.০৩% |
উপরের টেবিলে দেখা যাচ্ছে যে, ভিন্ন ভিন্ন পরিমানে ৫ প্রকারের মোট ৭.৫ কেজি মাছের দাম পূর্বের তুলনায় (২৫৩৫-১৭৬০) = ৭৭৫ টাকা অর্থাৎ ৪৪.০৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতীত প্রকল্প সংশোধন করে আমি ক্রয় কার্য সাধনের (Procurement) নিম্নরুপ প্রচেষ্টা নিয়েছিলাম।
মাছের নাম | পরিমান (কেজি) | পূর্বের মূল্য | মন্তব্য | |
একক মূল্য (টাকা) | মোট মূল্য (টাকা) | |||
চাষের শিং | ০ | ৫৫০ | ০ | কিনি নাই, সেক্রিফাইস |
চাষের কৈ | ২ | ২৪০ | ৪৮০ | |
চাষের তেলাপিয়া | ২ | ২৫০ | ৫০০ | |
চাষের পাবদা | ০ | ৫২৫ | ০ | কিনি নাই, সেক্রিফাইস |
চাষের রুই | ১.৫ | ৩২০ | ৪৮০ | |
চাষের পাঙ্গাস | ২ | ২০০ | ৪০০ | দাম সবচেয়ে কম বলে কিনেছি |
মোট | ৭.৫ | ১৮৬০ | তার পরেও ১০০ টাকা বেশি |
ব্যয় বৃদ্ধি প্রতিরোধ কল্পে আমি একজন ভোক্তা (ক্রয় সত্তা) হিসাবে যুক্তিগ্রাহ্য আচরণ করিতে গিয়া এক কেজি শিং ও ১ কেজি পাবদা মাছের পরিবর্তে (বিকল্প দ্রব্য) ২ কেজি চাষের পাঙ্গাস মাছ (বিকল্প দ্রব্য) ক্রয় করিয়াছি। ইহাতে আমার প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় মাত্র ১০০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পাইয়াছে। তবে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সম্ভাব্য ৬৭৫ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় সম্বরণ করা গিয়াছে।
শিং, পাবদার সাথে চাষের পাঙ্গাসের স্বাদের প্রশ্ন তুলিবেন? এই দুর্মূল্যের বাজারে একজন সুনাগরিক হিসাবে এটুকু বলিদান (Sacrifice) তেমন কিছুই নয়।
মাছের দাম ও মুরগির দাম একসাথে বৃদ্ধি পেলে করনীয় কি?
সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষের মুরগি মানে ব্রয়লার মুরগি।
একজন ক্রেতা চাষের শিং মাছ, চাষের তেলাপিয়া মাছ ও ব্রয়লার মুরগির মাংস নিম্নরুপ অনুমিতি সাপেক্ষে ভোগ করিতে চাহেন।
প্রথম পছন্দ (Preference) শিং মাছ, ২য় পছন্দ তেলাপিয়া মাছ, ৩য় পছন্দ ব্রয়লার মুরগির মাংস।
সব মিলিয়ে তিনি মাসে ২০ কেজি মাছ মাংস ভোগ করবেন যার ভিতর কম পক্ষে ৫ কেজি মুরগির মাংস থাকবে।
চাষের শিং মাছের দাম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, চাষের তেলাপিয়া মাছের দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৯৫ টাকা হলে আমরা তাঁর জন্য সম্ভাব্য ভোগ ও ব্যয়ের একটি ম্যাট্রিক্স তৈরি করতে পারি –
টেবিলঃ স্থির দামে বিভিন্ন দ্যব্যের বিভিন্ন পরিমানের সংমিশ্রণ
পছন্দ নং | চাষের শিং মাছ | চাষের তেলাপিয়া মাছ | ড্রেসড ব্রয়লার মাংস | সর্বমোট দাম (টাকা) | ||||||
পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | ||
১ | ১০ | ৪০০ | ৪০০০ | ৫ | ১৬০ | ৮০০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৫৭৭৫ |
২ | ৯ | ৪০০ | ৩৬০০ | ৬ | ১৬০ | ৯৬০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৫৫৩৫ |
৩ | ৮ | ৪০০ | ৩২০০ | ৭ | ১৬০ | ১১২০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৫২৯৫ |
৪ | ৭ | ৪০০ | ২৮০০ | ৮ | ১৬০ | ১২৮০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৫০৫৫ |
৫ | ৬ | ৪০০ | ২৪০০ | ৯ | ১৬০ | ১৪৪০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৪৮১৫ |
৬ | ৫ | ৪০০ | ২০০০ | ১০ | ১৬০ | ১৬০০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৪৫৭৫ |
৭ | ৪ | ৪০০ | ১৬০০ | ১১ | ১৬০ | ১৭৬০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৪৩৩৫ |
৮ | ৩ | ৪০০ | ১২০০ | ১২ | ১৬০ | ১৯২০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৪০৯৫ |
৯ | ২ | ৪০০ | ৮০০ | ১৩ | ১৬০ | ২০৮০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৩৮৫৫ |
১০ | ১ | ৪০০ | ৪০০ | ১৪ | ১৬০ | ২২৪০ | ৫ | ১৯৫ | ৯৭৫ | ৩৬১৫ |
এই ২০ কেজি মাছ ও মুরগির দাম বাবদ তিনি মোটামুটি (Approximately) ৫০০০ টাকা ব্যয় করতে সমর্থ এবং ইচ্ছুক। তাহলে উপরের টেবিল থেকে আমরা দেখতে পাই ৪নং পছন্দ (Choice/opsion) অর্থাৎ ৭ কেজি শিং মাছ, ৮ কেজি তেলাপিয়া মাছ এবং ৫ কেজি মুরগির মাংস তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু, উভয় প্রকার মাছের দাম এবং সেই সাথে মুরগির দামও বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপত্তি দেখা দিল।
চাষের শিং মাছের দাম প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, চাষের তেলাপিয়া মাছের দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৩৫ টাকা হওয়ায় আমরা তাঁর জন্য সম্ভাব্য ভোগ ও ব্যয়ের একটি ম্যাট্রিক্স তৈরি করতে গিয়ে দেখতে পাই তাঁর পূর্বের সংমিশ্রনে সর্বমোট খরচ হবে ৭০২৫ টাকা। যা পূর্বের খরচের চেয়ে ১৯৭০ টাকা বা প্রায় ৩৯% বেশি।
এই বাড়তি ব্যয় বহণ করা তাঁর ব্যয়যোগ্য আয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
টেবিলঃ বর্ধিত দামে বিভিন্ন দ্যব্যের বিভিন্ন পরিমানের পুনঃসংমিশ্রণ
পছন্দ নং | চাষের শিং মাছ | চাষের তেলাপিয়া মাছ | ড্রেসড ব্রয়লার মাংস | সর্বমোট দাম (টাকা) | ||||||
পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | পরিমান (কেজি) | একক দাম (টাকা) | মোট দাম (টাকা) | ||
১ | ৭ | ৫৫০ | ৩৮৫০ | ৮ | ২৫০ | ২০০০ | ৫ | ২৩৫ | ১১৭৫ | ৭০২৫ |
২ | ৬ | ৫৫০ | ৩৩০০ | ৭ | ২৫০ | ১৭৫০ | ৭ | ২৩৫ | ১৬৪৫ | ৬৬৯৫ |
৩ | ৫ | ৫৫০ | ২৭৫০ | ৬ | ২৫০ | ১৫০০ | ৯ | ২৩৫ | ২১১৫ | ৬৩৬৫ |
৪ | ৬ | ৫৫০ | ২২০০ | ৫ | ২৫০ | ১২৫০ | ১১ | ২৩৫ | ২৫৮৫ | ৬০৩৫ |
৫ | ৩ | ৫৫০ | ১৬৫০ | ৪ | ২৫০ | ১০০০ | ১২ | ২৩৫ | ৩০৫৫ | ৫৭০৫ |
৬ | ২ | ৫৫০ | ১১০০ | ৩ | ২৫০ | ৭৫০ | ১৫ | ২৩৫ | ৩৫২৫ | ৫৩৭৫ |
৭ | ১.৫ | ৫৫০ | ৬২৭ | ২.৫ | ২৫০ | ৬২৫ | ১৬ | ২৩৫ | ৩৭৬০ | ৫২১২ |
৮ | ১ | ৫৫০ | ৫৫০ | ৩ | ২৫০ | ৭৫০ | ১৬ | ২৩৫ | ৩৭৬০ | ৫০৬০ |
৯ | ১ | ৫৫০ | ৫৫০ | ৪ | ২৫০ | ১০০০ | ১৫ | ২৩৫ | ৩৫২৫ | ৫০৭৫ |
১০ | ১ | ৫৫০ | ৫৫০ | ৫ | ২৫০ | ১২৫০ | ১৪ | ২৩৫ | ৩২৯০ | ৫০৯৫ |
১১ | ০.৫ | ৫৫০ | ২৭৫ | ১৩ | ২৫০ | ৩২৫০ | ৬.৫ | ২৩৫ | ১৫২৮ | ৫০৫৩ |
১২ | ০ | ৫৫০ | ০ | ১৫ | ২৫০ | ৩৭৫০ | ৫ | ২৩৫ | ১১৭৫ | ৪৯২৫ |
উপরের টেবিল থেকে দেখা যায় তিনি ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে তাঁর রুচির উপর ভিত্তি করে ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং পছন্দের যে কোনটি ভোগ করতে পারেন।
মাছের দাম ও ডিমের দাম একসাথে বৃদ্ধি পেলে করনীয় কি?
মাছ ও ডিম উভয়ই প্রানিজ আমিষের যোগান দেয়। তাই মাছের দাম ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেলে পরিবর্তিত সংমিশ্রনের দ্বারা ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ভোক্তা পরিবারের নিরবিচ্ছিন্ন প্রানিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
ধরি, একটি পরিবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে ৮ কেজি মাছ ও ৪৮ টি ডিম ভক্ষণ করে। যখন মাছের কেজি গড়ে ২৬০ টাকা এবং মুরগির ডিম প্রতিটি ৯ টাকা তখন তাদের এই মাছ ও ডিম বাবদ ব্যয় হয় ২৫১২ টাকা ।
কিন্তু মাছের দাম ও ডিমের দাম বৃদ্ধ পাওয়ায় বর্তমানে মাছের দাম প্রতি কেজি গড়ে ৩৬৫ টাকা এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতিটি ১১.৪০ টাকা (বাস্তব বাজার দর) হওয়ায় পূর্বের কম্বিনেশনে ওই পরিবারের খরচ হবে ৩৪৭০ টাকা।
ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে সম পরিমান প্রানিজ আমিষ গ্রহন অব্যাহত রাখতে হলে ওই পরিবারের জন্য মাছ ও ডিমের পরিমানের নতুন কম্বিনেশন বের করতে হবে। ১৬ টি ডিমে ১ কেজি মাছের সমান আমিষ থাকে। বা ৪ টি ডিম ২৫০ গ্রাম মাছের সমান। যেহেতু ১ কেজি মাছের দাম ১৬ টি ডিমের দাম অপেক্ষা বেশি, তাই দাম বৃদ্ধির স্তরে ব্যয় স্থির রেখে আমিষের সরবরাহ ঠিক রাখতে মাছের পরিবর্তে ডিম খাওয়া বাড়াতে হবে। মাছের দাম কমতে থাকলে মাছ খাওয়া বাড়ানো যেতে পারে।
টেবিলঃ পূর্বের দাম ও বর্ধিত দামে মাছ ও ডিম ভক্ষনের সংমিশ্রণ
বিভিন্ন প্রকার চাষের মাছ | ফার্মের মুরগির ডিম | মোট খরচ
| |||||
পরিমান (কেজি) | একক গড় মূল্য টাকা) | মোট মূল্য | সংখ্যা (টি) | একক মূল্য (টাকা) | মোট মূল্য | ||
পূর্বের ভোগ | ৮ | ২৬০ | ২০৮০ | ৪৮ | ৯ | ৪৩২ | ২৫১২ |
বর্তমান ভোগ প্রক্ষেপন | ৮ | ৩৬৫ | ২৯২০ | ৪৮ | ১১.৪০ | ৫৪৭ | ৩৪৬৭ |
৭ | ৩৬৫ | ২৫৫৫ | ৬৪ | ১১.৪০ | ৭৩০ | ৩২৮৫ | |
৬ | ৩৬৫ | ২১৯০ | ৮০ | ১১.৪০ | ৯১২ | ৩১০২ | |
৫ | ৩৬৫ | ১৮২৫ | ৯৬ | ১১.৪০ | ১০৯৪ | ২৯১৯ | |
৪ | ৩৬৫ | ১৪৬০ | ১১২ | ১১.৪০ | ১২৭৭ | ২৭৩৭ | |
৩ | ৩৬৫ | ১০৯৫ | ১২৮ | ১১.৪০ | ১৪৫৯ | ২৫৫৪ | |
২.৭৫ | ৩৬৫ | ১০০৪ | ১৩২ | ১১.৪০ | ১৫০৫ | ২৫০৯ | |
২.৫ | ৩৬৫ | ৯১৩ | ১৩৬ | ১১.৪০ | ১৫৫০ | ২৪৬৩ |
উপরের টেবিল থেকে দেখা যায় পূর্বমূল্যের ৮ কেজি মাছ ও ৪৮ টি ডিমের সংমিশ্রণকে বর্তমান মূল্যের ২.৭৫ কেজি মাছ ও ১৩২ টি ডিমের সংমিশ্রণ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়।
বিঃদ্রঃ এই প্রবন্ধে সব পণ্যের বাস্তব দাম ধরে হিসাব করা হয়েছে। মাছ, মুরগির মাংস ও ডিমের সংমিশ্রণে প্রতিটি ক্ষেত্রে মাছকে প্রথম পছন্দ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। কোন বিভ্রান্তির অবকাশ নাই।
দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতি নিয়ে শ্রদ্ধেয় ছড়াকার স্বপন ঘোষ মহোদয়ের একটি চমৎকার ছড়াঃ আক্কেল আলীর আক্কেল গুড়ুম পড়ার অনুরোধ রইল। না পড়লে চরম মিস করবেন।[/fusion_text][/fusion_builder_column][/fusion_builder_row][/fusion_builder_container]
Leave A Comment