ছাগলের জাত সম্পর্কে বলার আগে ছাগল পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।
Table of Contents
ছাগল পালনের গুরুত্ব
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের মধ্যে ছাগল অতি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল।
ছাগল এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও দারিদ্র হ্রাস, মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ছাগল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য এদেশে প্রায় দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ ছাগল রয়েছে।
ছাগল পালনের জন্য অল্প জায়গা ও স্বল্প পুঁজি লাগে এবং কম খাদ্য খরচ হয়।
আত্মকর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহ সর্বোপরি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।
ছাগল পালনের বিশেষ দিক
ছাগল পালনের জন্য অল্প জায়গা লাগে।
ছাগল পালনে স্বল্প পুঁজি লাগে। খুব কম পুঁজি নিয়ে ছোট আকারে ছাগলের খামার শুরু করলেও অল্প দিনে তা বৃহৎ আকারের খামারে উন্নীত করা সম্ভব।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল ছাগল পালনের জন্য খুবই উপযোগী।
ছাগল উন্নত মানের মাংস, চামড়া ও জৈব সার উৎপাদন করে।
গরুর সংগে মিশ্রভাবে ছাগল পালন করা যায়।
বাংলাদেশের ছাগল
বাংলাদেশে ২ ধরণের ছাগল আছে – দেশি আর বিদেশি।
দেশি ছাগল বলতে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল।
আর বিদেশি ছাগল বলতে যমুনাপারী, বিটল, শিহোলি, বোয়ার ইত্যাদি।
আগে এদেশের প্রায় সকল ছাগল ছিল ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, আর সামান্য পরিমানে যমুনাপারী ছাগল। কিন্তু ইদানিং অন্যান্য বিদেশি জাতের পাঁঠার অনুপ্রবেশ এবং তার দ্বারা দেশি ছাগীর সাথে অপরিকল্পিত এবং অদূরদর্শী আত্মঘাতী সংকরায়নের ফলে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।
ছাগলের জাত পরিচিতি
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাংস, দুধ, চামড়া ও পশম উৎপাদনের জন্য অনেক উন্নত জাতের ছাগল রয়েছে। দুধ, মাংস ও উল উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে ছাগলের জাতকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১। মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের জাত – ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, বোয়ার, দামানি, বিটল প্রভৃতি ছাগল মাংস উৎপাদনকারী জাত। এসব জাতের ছাগলের মাংস অত্যন্ত ভাল মানের। তন্মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের মাংস মানে এবং স্বাদে সেরা।
২। দুধ উৎপাদনকারী ছাগলের জাত – যমুনাপারী, সানেন, অ্যাংলো নুবিয়ান, বারবারি, বৃটিশ আলপাইন প্রভৃতি দুধ উৎপাদনকারী ছাগলের জাত। এ ধরনের ছাগল হতে দৈনিক গড়ে ১-৪ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
৩। চামড়া উৎপাদনকারী ছাগলের জাত – ব্ল্যাক বেঙ্গল, মালবারি, বারবারি, দামাসকাস প্রভৃতি চামড়া উৎপাদনকারী ছাগলের জাত। এই শ্রেনির ছাগলের চামড়া দিয়ে উন্নত মানের চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত করা হয়। সারা পৃথিবীতে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়ার সুখ্যাতি রয়েছে।
৪। পশম উৎপাদনকারী ছাগলের জাত – অ্যাংগোরা, কাশ্মিরী, মেরাডি প্রভৃতি পশম উৎপাদনকারী ছাগলের জাত। এ শ্রেনির ছাগলের লোম হতে উন্নতমানের দামী পোশাক ও গরম কাপড় তৈরি করা হয়।
বিভিন্ন জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্য
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের দেহ সাধারণতঃ খাটো। উচ্চতা ১৬-২৯ ইঞ্চি। দেহ সুগঠিত। পা খাড়া ও শক্ত।
এদের দেহ কালো লোম দ্বারা আবৃত। তবে এজাতের খয়েরি, সাদা বা মিশ্র রংয়ের ছাগলও দেখা যায়। পশম ছোট এবং সারা শরীরের পশম একই রকম।
এদের কান ছোট, খাড়া ও ভুমির সাথে সমান্তরাল।
শিং ছোট, খাড়া ও কালো।
পূর্ণ বয়স্ক ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের গড় দৈহিক ওজন ২০- ৩০ কেজি। পূর্ণ বয়স্ক পাঁঠার গড় ওজন ২৫-৪০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ১৫-২৫ কেজি।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল শারীরিকভাবে অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
সদ্যজাত বাচ্চার ওজন ১ কেজির উপরে হলে বাচ্চা মৃত্যু হার অনেক কম হয়।
৬-৮ মাস বয়সে এরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়।
১২-১৪ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগী ১৫ মাসে গড়ে দুই বার বাচ্চা দেয়।
খাটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগী একবারে ২-৪ টি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। কখনো কখনো প্রথম বারে ১ টি বাচ্চা দেয়। তবে পরে কিছু কিছু ছাগীকে একবারে ৫-৬ টি বাচ্চা দিতেও দেখা যায়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীর ওলান ছোট। দুধ উৎপাদনও কম। ল্যাকটেশন পেরিয়ডে এরা দৈনিক গড়ে ৪০০-৫০০ মি,লি দুধ দেয় যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাগলছানার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই বেশি বাচ্চা হলে বিকল্প দুধের প্রয়োজন হয়। না হলে অপুষ্টিতে বাচ্চা মারা যায় বা বেঁচে থাকলেও শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল খাসীর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। একটি ২০ কেজি ওজনের খাসী হতে গড়ে ১১ কেজি খাবারযোগ্য় মাংস পাওয়া যায়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া অতি উন্নত মানের বিধায় বিশ্বব্যাপী এর কদর রয়েছে। একটি ২০ কেজি ওজনের ছাগল থেকে গড়ে ১.২-১.৪ কেজি চামড়া পাওয়া যায়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের সুবিধা
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে অল্প জায়গা, স্বল্প পুঁজি এবং কম খাদ্য খরচের প্রয়োজন হয়।
আমাদের আবহাওয়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের জন্য খুবই উপযোগী।
এ জাতের ছাগলের রোগ ব্যাধি খুব কম হয়।
ছাগী সাধারণতঃ ৭-৮ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয়। ১২-১৪ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়।
একবারে ২-৪টি কখনও কখনও ৫-৬টি বাচ্চাও প্রসব করে থাকে।
দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে।
মাংস অচ্যন্ত সুস্বাদু। দেশে এবং বিদেশে এই জাতের ছাগলের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
চামড়ার মান অনেক ভালো। এর চামড়ার সুখ্যাতি ও বিপুল চাহিদা রয়েছে।
গ্রামীন পরিবেশে পারিবারিকভাবে দরিদ্র দুস্থ নারীরাও এটি পালন করে সাবলম্বী হতে পারেন।
অত্যন্ত নিরীহ বলে ছোট শিশু, ছাত্র-ছাত্রী, নারী সকলেই এর পরিচর্যা ও দেখাশুনা করতে পারে।
যে কোন সময় বাজারজাত করা যায়। তবে কোরবানীতে বিপুল চাহিদা পরিলক্ষিত হয়।
অনুষ্ঠানাদি, অতিথি আপ্যায়ন, সামাজিকতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
যমুনাপারী ছাগল
যমুনাপারী ছাগলের শরীরের গঠন লম্বাটে। এদের পা বেশ লম্বা; পিছনের পায়ের পিছনের লোম লম্বা হয়ে থাকে। এদের কান অনেক লম্বা ও ঝুলন্ত। সাধারনতঃ ২০-২৫ সেন্টিমিটার ঝুলন্ত কান দেখা যায়।
ছাগীর ওলান বড়, সুগঠিত ও ঝুলানো। বাটগুলি মোটা ও লম্বা।
শরীরের উচ্চতা ৩২-৪০ ইঞ্চি।
পাঁঠার ওজন গড়ে ৭৫-১০০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৫০-৭৫ কেজি হয়ে থাকে।
এরা দেরিতে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। ছাগী বছরে একবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার গর্ভধারণে এরা সাধারনতঃ ১ টি বাচ্চা প্রসব করে।
ল্যাকটেশন পেরিয়ডে ছাগী প্রতিদিন গড়ে ২-৪ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। প্রতি ল্যাকটেশনে এরা সর্বোচ্চ ৬১৮ লিটার দুধ দেয়।
এদের মাংস ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংসের মত সুস্বাদু নয়। চামড়াও তেমন উন্নত মানের নয়। তবুও দুধ ও মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে যমুনাপারী জাতের ছাগল পালন করা হয়।
বোয়ার ছাগল
১৯০০ সালের দিকে সাউথ আফ্রিকাতে প্রথম দেখা যায়। বোয়ার Afrikaans (Dutch) শব্দ যার অর্থ হলো খামারি। ছাগলের এই জাত তৈরী করা হয়েছে শুধু মাংস উৎপাদনের জন্য। দুধের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। বোয়ার ছাগী প্রতিদিন গড়ে ০.৫ কেজি দুধ দেয়। একটি ছাগীর গড় দুধের উৎপাদন ১২০ দিনের ল্যাকটেশন পেরিয়ডে মাত্র ৬৫ কিলোগ্রাম।
বোয়ার ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে এবং গরম, শুকনো সেমিডেসার্ট এলাকার আবহাওয়ার সাথে ভাল মানিয়ে যায়।
বোয়ার ছাগলের রং সাধারণত সাদা এবং মাথার দিক বাদামী। কিছু বোয়ার ছাগল সম্পূর্ণ বাদামী বা সাদা বা মিশ্রিত রংয়ের হতে পারে। দেহে বিভিন্ন রঙের বড় বড় দাগ থাকে।
এদের লম্বা, দুলযুক্ত কান থাকে।
এরা স্বভাবে নম্র, দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ উর্বরতা হারের জন্য বিখ্যাত।
অন্যান্য জাতের তুলনায় উচ্চতর মাতৃত্বের দক্ষতা রয়েছে বলে জানা গেছে। বোয়ার ছাগী পাঁচ মাস বয়সে যৌন পরিপক্কতায় পৌঁছে। এরা প্রতি ২ বছরে ৩টি বাচ্চা উৎপাদন করে। প্রথমবার ১ টি এবং পরে প্রতিবারে সাধারণতঃ ২টি বাচ্চা দেয়।
সঠিক পরিচর্যায় পূর্ণবয়স্ক পুরুষ খাটি বোয়ার ছাগলের ওজন ৭০-১৩০ কেজি এবং পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন ৫০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। পুরুষ ও মহিলার দৈনিক গড় ওজন বৃদ্ধি যথাক্রমে ২৫০ গ্রাম ও ১৮৬ গ্রাম হয়ে থাকে।
বিটল ছাগল
বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য অনেকটা যমুনাপারী ও মালবারী ছাগলের মত।
বানিজ্যিক ভাবে বিটল জাতের ছাগল মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হলেও এটি দুধ উৎপাদনেও পালন করা যায়। এটি লাহরী ছাগল নামেও পরিচিত।
এই জাতের ছাগলের আদি বাসস্থান ভারতের ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ।
বিটল ছাগল আকারে অনেক বড় ও দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। বংলাদেশেও এই জাতের ছাগল পালন করা হয়।
মুক্ত বা ছাড়া অবস্থায় পালন করার পাশাপাশি আবদ্ধ এবং স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালন করা যায়।
এই জাতের ছাগলের গ্রোথ বা বৃদ্ধির হার বেশি ফলে দ্রুত বাড়ে।
- আকারে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চেয়ে বড় ও যমুনাপারী ছাগলের চেয়ে ছোট হয়।
- শরীরের রং কালো, সাদা, বাদামি, বাদামির সাথে সাদা ফোটা যুক্ত হয়।
- বিটল জাতের ছাগলের কান লম্বা ও ঝুলানো হয়। অনেকটা যমুনাপারী ছাগলের মত দেখতে হয়।
- বিটল জাতের ছাগলের শিং লম্বা ও পেছনে বাঁকানো হয়।
- খাসি ও পাঠি উভয় ছাগলের শিং থাকে।
- ছাগলের পা তুলনামুলক লম্বা হয়।
- দৈহিক উচ্চতা ৩০-৩৫ ইঞ্চি।
- পূর্ণবয়স্ক খাসির ওজন ৬০-৭০ কেজি এবং পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০-৪৫ কেজি হয়ে থাকে।
- পুরুষ ছাগলের শরীরের লোম ছোট ছোট হলেও মহিলা ছাগলের শরীরে লম্বা লম্বা লোম দেখা যায়।
- বিটল ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
- সব ধরনের পরিবেশে এই ছাগল পালন করা য়ায়।
- এই ছাগল ১২-১৫ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয়। এই জাতের ছাগল প্রায় দুই বছর বয়সে প্রথম বার বাচ্চা প্রদান করে। বছরে এক জোড়া বাচ্চা প্রদান করে এবং বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ খেতে পারে। বিটল জাতের ছাগী প্রতিদিন ৩-৪ লিটার দুধ দিতে পারে। এই ছাগল বছরে একবার বাচ্চা প্রদান করে।
মালাবারী ছাগল
মালাবারী ছাগল কেরালার মালাবার জেলায় পালন করা হয় এবং কখনও কখনও একে তেলিচেরি ছাগল বলা হয়।
এগুলি বেশিরভাগ মাংসের জন্য পালন করা হয়, তবে এরা দুধও উৎপাদন করে। পূর্ণ বয়স্ক ছাগীর গড় ওজন ৩০ কেজি এবং পূর্ণ বয়স্ক পাঁঠার ওজন ৪১ কেজি।
এদের গায়ের রং সাদা, কালো বা মিশ্রিত হয়।
মালাবারী ছাগলের কান ও পা খাটো এবং বড় অণ্ডকোষ রয়েছে।
মালাবারী ছাগল দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে এবং ৮ থেকে ১০ মাস বয়সে গর্ভধারণ করে। পুরুষ ৯-১২ মাস বয়সে প্রজনন শুরু করে। এই জাতটির একটি ভাল প্রজনন বৈশিষ্ট্য রয়েছে; যেমন এরা ৫০% যমজ, ২৫% ট্রিপলেট এবং ৫% চারটি বাচ্চা দেয়।
দুধের উৎপাদন প্রতিদিন ০.৫ থেকে ১.৫ লিটার।
দামানি ছাগল
দামানি হল একটি দুধ উৎপাদনকারী ছাগল যা পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলায় পাওয়া যায়।
এগুলি মাঝারি আকারের এবং পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের গড় ওজন প্রায় ৩৫ কেজি।
এদের পশম লম্বা, রং সাধারণতঃ কালো, মাথা এবং পায়ে সাদা টান থাকে। ছাগী থেকে দৈনিক গড়ে ১.৮ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের ওজন: পুরুষ: ৩৫ কেজি, মহিলা: ৩০ কেজি
পশম উৎপাদন: বার্ষিক ০.৭ কেজি।
বারবারি ছাগল
বারবারি বা বারি হল ছোট গৃহপালিত ছাগলের একটি জাত যা ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় পাওয়া যায়। এটি ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে দেখা যায়।
বারবারি ছাগলের গায়ের রং বিচিত্র। তবে সাধারণতঃ সাদা ও হালকা বাদামী রংয়ের ছোপযুক্ত ছাগল বেশি দেখা যায়।
বারবারি ছাগলের মাঝারি আকারের কমপ্যাক্ট শরীর। এদের কান খাটো, নলাকার, সামনের দিকে খোলা, খাড়া, ঊর্ধ্বমুখী ও বাইরের দিকে ছড়ানো।
পাঁঠার বড় ঘন দাড়ি আছে।
ছাগী এবং পাঁঠা উভয়েরই খাড়া পিছনের দিকে বাঁকানো পেচানো শিং আছে।
ছাগীর সুগঠিত ওলান ও বাট আছে।
ওজন: পুরুষ: ৩৮ কেজি; মহিলা: ২৩ কেজি;
উচ্চতা: পুরুষ: ২৮ ইঞ্চি; মহিলা: ২২ ইঞ্চি;
এরা তাড়াতাড়ি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। ছাগী একসাথে ৩টি বাচ্চা দিতে পারে।
এজাতের ছাগল রোগ প্রতিরোধী।
বারবারি জাতের ছাগল দ্বৈত উদ্দেশ্যে (মাংস এবং দুধ) পালন করা হয়।
সানেন ছাগল
সানেন একটি উচ্চ উৎপাদনশীল দুগ্ধ উৎপাদনকারী ছাগল এবং সারা বিশ্বের আশিটিরও বেশি দেশে এগুলি পালন করা হয়।
সানেন হল সুইস ছাগলের সবচেয়ে বড় জাত।
উচ্চতাঃ- পুরুষ- ৩৫ ইঞ্চি ও মহিলা- ৩২ ইঞ্চি; সর্বনিম্ন ৮৫ কেজি ওজনের হয়।
এদের সাদা চামড়া এবং ছোট সাদা পশম আছে। সাদার ভিতর অন্য রংয়ের ছিটেও দেখা যায়।
এরা শিংযুক্ত বা শিংবিহীন হতে পারে। কান উপরের দিকে এবং সামনের দিকে খাড়া।
এজাতের ছাগলের দুধে ন্যূনতম ৩.২% চর্বি এবং ২.৭% প্রোটিন থাকে। একটি সুইস সানেন ছাগী দৈনিক ৮-৯ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। দৈনিক ১১ লিটার দুধ দেয়ারও রেকর্ড রয়েছে।
সানেন জাতের ছাগী ৮-১০ মাসে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়। বছরে একবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার ১-২ টি বাচ্চা দেয়।
সানেন যে কোন জায়গায় পালনের উপযুক্ত নয় এবং সাধারণত নিবিড়ভাবে পালন করতে হয়। কারণ, এরা ফ্যাকাশে-চর্মযুক্ত বলে শক্তিশালী সূর্য রশ্মি সহ্য করতে পারে না।
টগেনবার্গ ছাগল
টগেনবার্গ হল দুগ্ধ উৎপাদনকারী ছাগলের একটি সুইস জাত। এর নামটি সেন্ট গ্যালেনের ক্যান্টনের টগেনবার্গ অঞ্চল থেকে এসেছে, যেখানে এটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এটি দুগ্ধজাত ছাগলের সবচেয়ে উৎপাদনশীল জাতগুলির মধ্যে একটি এবং সব মহাদেশের অন্তত পঞ্চাশটি দেশ ব্যাপী রয়েছে।
টগেনবার্গ মাঝারি আকারের ছাগল। গায়ের রঙ হালকা বাদামী থেকে মাউস ধূসর। মুখ, নীচের পা এবং লেজের অংশে সাদা সুইস চিহ্ন আছে।
পুরুষ এবং মহিলা স্বাভাবিকভাবেই শিংওয়ালা বা শিংবিহীন হতে পারে।
ব্রিড স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ল্যাকটেশন পেরিয়ডে এজাতের একটি ছাগী কমপক্ষে ৭৪০ কেজি দুধ দিয়ে থাকে, যার ন্যূনতম চর্বি ৩.৫৬% এবং ন্যূনতম প্রোটিন ২.৯০%।
কাশ্মীরি ছাগল
কাশ্মীরি ছাগলকে কাশ্মীর ছাগলও বলা হয়, এটি গৃহপালিত ছাগলের একটি জাত। এজাত নরম উলের জন্য বিখ্যাত। এদের উল কাশ্মীরি শাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
এরা বিভিন্ন আকার এবং রঙের হয়।
এজাতের ছাগলের বড় কান, সরু অঙ্গ, বাঁকা ছড়িয়ে থাকা শিং।
এদের পশম দীর্ঘ, সোজা, রেশমি সাদা। মোটা চুলের বাইরের আবরণের নীচে তুলতুলে, নরম আন্ডারফার বা পশম (সমস্ত ছাগলের মধ্যে উপস্থিত) থাকে। যা দিয়ে বিশেষভাবে বিলাসবহুল পণ্য তৈরি করা যায় বলে এ জাতটিকে মূল্যায়ন করা হয়।
পূর্ণ বয়স্ক পাঁঠার ওজন ৫৪ কেজি এবং পূর্ণ বয়স্ক ছাগীর ওজন ৪৫ কেজি।
এদের সব ধরণের জলবায়ু সহনশীলতা রয়েছে।
আঙ্গোরা ছাগল
অ্যাঙ্গোরা বা আঙ্কারা হল গৃহপালিত ছাগলের একটি তুর্কি জাত। এটি মোহেয়ার নামে পরিচিত উজ্জ্বল ফাইবার তৈরি করে।
উভয় লিঙ্গ শিংযুক্ত এবং কান লম্বা এবং ঝুলন্ত। কোটের শক্তিশালী ইলাস্টিক ফাইবার (মোহেয়ার) মূলতঃ এর মসৃণতা এবং দীপ্তিতে উলের থেকে আলাদা।
উচ্চতা: পুরুষ- ২৬ ইঞ্চি; মহিলা- ২০ ইঞ্চি;
ওজন: পুরুষ- ৪৫ কেজি; মহিলা- ৩৫ কেজি;
উলের রঙ: সাধারণত সাদা, এছাড়াও কালো, বাদামী বা ধূসরও হতে পারে।
অ্যাঙ্গোরা ছাগল সাধারণত ১০ বছরের বেশি বাঁচে যদি তারা ভাল যত্ন পায়।
অ্যাংলো-নুবিয়ান ছাগল
অ্যাংলো-নুবিয়ান গৃহপালিত ছাগলের একটি ব্রিটিশ জাত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেশীয় ব্রিটিশ ছাগল এবং ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে আমদানি করা বৃহৎ কানের ছাগলের ক্রস-প্রজনন থেকে এর উৎপত্তি। মাংস ও দুধের জন্য এ জাতের ছাগল পালন করা হয়।
উচ্চতা: পুরুষ- ৩৬ ইঞ্চি, মহিলা- ৩২ ইঞ্চি।
ওজন: পুরুষ – ১১০ – ১৪০ কেজি পর্যন্ত, মহিলা – ৮০ – ১১০ কেজি পর্যন্ত।
নুবিয়ান ছাগলের বিভিন্ন ধরণের রঙ এবং প্যাটার্ন হয়। কালো, ট্যান এবং চেস্টনাট এর মধ্যে অন্যতম। সাধারণতঃ সাদা বা ফ্যাকাশে প্যাচ বা মটল থাকে । সাদা মুখের স্ট্রাইপগুলি সুইস বংশোদ্ভূত ছাগলের সাথে ক্রসব্রিডিংয়ের একটি ইঙ্গিত বহন করতে পারে।
এ জাতের ছাগলের দুধ থেকে বিখ্যাত সব পনির তৈরি হয়। পনিরের জন্য আমেরিকায় এ ছাগলকে সেরা বলে গন্য করা হয়।
এজাতের ছাগী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ লিটার করে দুধ দেয়। এক ল্যাকটেশনে এদের গড় দুধ উৎপাদন ৮৭০ কেজি। দুধে ৪.৮% বাটারফ্যাট এবং ৩.৫% প্রোটিন থাকে।
[…] দুস্থ ও বয়স মতিলাদের জন্য এই পদ্ধতিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন জীবন জীবিকার অন্যতম […]
[…] আরও পড়তে পারেন: ছাগলের জাত পরিচিতি […]