Table of Contents
উপযোগ কি?
সাধারণ অর্থে উপযোগ বলতে কোন দ্রব্যের প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতাকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে উপযোগ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। কোন দ্রব্যের দ্বারা মানুষের অভাব পুরণের ক্ষমতাকে অর্থনীতির ভাষায় উপযোগ বা utility বলা হয়।
কোন দ্রব্য বা সেবার মধ্যে মানুষের অভাব বা চাহিদা পূরণের ক্ষমতা থাকলেই তার utility আছে বলে ধরা হয়। যেমন – কলম দিয়ে আমাদের লেখার চাহিদা পূরণ হয়, পানি পিপাসা নিবারণ করে, খাদ্যদ্রব্য ক্ষুধা দূর করে, পরিবহন আমাদের যাতায়াত সমস্যার সমাধান করে। অতএব কলম, পানি, খাদ্যদ্রব্য, পরিবহন ইত্যাদির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের utility রয়েছে। সুতরাং, পণ্যদ্রব্য বা সেবার অভাব পূরণের ক্ষমতাই হল utility।
মোট কথা, বিভিন্ন প্রকার বস্তুগত ও অবস্তুগত পণ্যদ্রব্যের মধ্যে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা বা অভাব পুরণের যে ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে তাকেই সে দ্রব্যের utility বলা হয়।
উপযোগ শব্দ থেকে এসেছে উপযুক্ততা। যা চাহিদা বা অভাব পূরণ করতে পারে তাই উপযুক্ত।
Utility হল সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যার Utility নাই অর্থাৎ যা মানুষের অভাব বা চাহিদা পূরণ করতে পারে না তা সম্পদ নয়। সম্পদ বস্তুগত বা অবস্তুগত হতে পারে; তবে অবশ্যই তার মানুষের অভাব বা চাহিদা পূরণের ক্ষমতা অর্থাৎ Utility থাকতে হবে।
কোন খামারের বর্জ ব্যবহার না করলে তা আবর্জনা; আবার যদি ব্যবহার উপযোগী করা যায় তখন তা সম্পদ। যেমন- মুরগি বা ডেইরি খামারের বিষ্ঠা প্রাথমিকভাবে আবর্জনা হিসাবে গণ্য়; কিন্তু তা থেকে জৈব সার উৎপাদন করে জমির উর্বরতার অভাব পূরণ করলে সেটি সম্পদে রূপান্তরিত হয়।
অর্থনীতিতে উপযোগকে দুই ভাবে আলোচনা করা হয়। যথা- সংখ্যাগত utility ও পর্যায়গত utility।
সংখ্যাগত উপযোগ কি?
দ্রব্যের উপযোগকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করলে তাকে বলা হয় সংখ্যাগত utility। দ্রব্যের উপযোগের পরিমান পরিমাপের জন্য তাকে সংখ্যায় প্রকাশ করলে তখন তাকে বলে সংখ্যাগত utility। ভোক্তা দ্রব্যের বিভিন্ন একক ভোগের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপযোগকে সংখ্যার মাধ্যমে (১০ টাকা, ১১ টাকা, ১২ টাকা ইত্যাদি) প্রকাশ করতে পারে। তখন তাকে বলা হয় সংখ্যাগত utility। যেমন, আজিম প্রথম ১ কেজি আম ভোগ করে ১০০ টাকার সমান, ২য় কেজি আম ভোগ করে ৯৫ টাকার সমান এবং ৩য় কেজি আম ভোগ করে ৯০ টাকার সমান Utility পেল। ৩ কেজি আম থেকে সে মোট utility পেল (১০০+৯৫+৯০=২৮৫) ২৮৫ টাকার সমান। এভাবে ভোক্তা যখন তার উপযোগকে সংখ্যাগত এককের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে তখন তাকে বলা হয় সংখ্যাগত utility।
অর্থনীতিবিদ Gossen, Jevons, Walras, A. Marshal প্রমুখ সংখ্যাগত utility ধারণার সমর্থক।
চাহিদা তত্ত্বটি মূলত সংখ্যাগত উপযোগ ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কোন ব্যক্তি কোন দ্রব্য থেকে যে পরিমান Utility ভোগ করে সে সেই পরিমান মূল্য পরিশোধ করতে আগ্রহী থাকে। উপরের উদাহরণে আজিম প্রথম ১ কেজি আম থেকে ১০০ টাকার Utility পাবে বলে সে ১ম ১ কেজি আম ১০০ টাকায় কিনতে রাজী থাকবে। পরবর্তীতে আমের প্রতি আজিমের (ভোক্তার) আগ্রহ কমতে থাকবে। তাই সে আর ১০০ টাকায় ২য় কেজি আম নিতে চাইবে না, কারণ ২য় কেজি আম থেকে সে কম Utility ভোগ করবে। আজিমকে যুক্তিবাদী ভোক্তা গণ্য করলে ১০০ টাকা দরে আমের চাহিদা ১ কেজি, ৯৫ টাকা দরে আমের চাহিদা ২ কেজি এবং ৯০ টাকা দরে আমের চাহিদা ৩ কেজি। utility ও চাহিদা ভোক্তার আচরণের উপর নির্ভরশীল।
পর্যায়গত উপযোগ কি?
ভোক্তার উপযোগকে সংখ্যাগত এককে পরিমাপ না করে যখন বিভিন্ন পর্যায়ে বা স্তরের দ্বারা বোঝানো হয় এবং বিভিন্ন স্তরের উপযোগের মধ্যে তুলনা করা হয় তখন তাকে বলা হয় পর্যায়গত utility। যেমন প্রথম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ইত্যাদি পর্যায়ে বিভক্ত করে উপযোগকে তুলনা করাকে বলা হয় পর্যায়গত Utility। Pareto, Hics, Antonelli, Fisher, Allen প্রমুখ অর্থনীতিবিদগণ প্রথমে Ordinal utility-র ধারণা প্রদান করেন। তাঁদের মতে utility একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। কাজেই এটা সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ ও পরিমাপ করা যায় না। তাই বিভিন্ন পর্যায়ের Utility যোগ করে মোট উপযোগও নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের উপযোগের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব। যেমন প্রথম পর্যায়ের Utility কম এবং ২য় পর্যায়ের Utility বেশি। পর্যায়গত Utility ধারণার উপর ভিত্তি করে নিরপেক্ষ রেখা বিশ্লেষণ গড়ে উঠেছে।
সংখ্যাগত উপযোগ ও পর্যায়গত উপযোগের মধ্যে পার্থক্য কি?
Difference between Cardinal and Ordinal Utility
নিম্নে Cardinal Utility ও Ordinal utility এর মধ্যে পার্থক্যসমুহ তুলে ধরা হল –
১। কোন দ্রব্য ভোগের মাধ্যমে প্রাপ্ত utilityকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ ও পরিমাপ করা হলে তাকে বলা হয় Cardinal Utility।
অন্যদিকে, সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ না করে ভোক্তা যদি utilityর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে তুলনা করতে পারে তখন তাকে বলা হয় Ordinal utility।
২। সংখ্যাগত utilityর ক্ষেত্রে ভোক্তা ১, ২, ৩, ৪, ৫……. ইত্যাদি সংখ্যার মাধ্যমে Utility প্রকাশ করতে পারে।
কিন্তু পর্যায়গত utilityর ক্ষেত্রে ভোক্তা utilityকে বিভিন্ন স্তর যেমন – ১ম, ২য়, ৩য় ইত্যাদির মাধ্যমে তুলে ধরে এবং একটি স্তরের সাথে অপর স্তরের তুলনা করে।
৩। সংখ্যাগত utilityর মূল ভিত্তি হচ্ছে চাহিদা তত্ত্ব (Demand theory) ।
কিন্তু Ordinal utility বিশ্লেষণের মূল ভিত্তি হচ্ছে নিরপেক্ষ রেখা বিশ্লেষণ (Indifference curve analysis) ।
৪। সংখ্যাগত Utility তত্ত্বে ভোক্তা একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত Utility অথবা বিভিন্ন দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত Utility যোগ করে মোট Utility নির্ণয় করতে পারে। অর্থাৎ সংখ্যাগত Utility বিশ্লেষণ ভোগোত্তর বৈশিষ্ট্য (Additive characteristics) পূরণ করে।
কিন্তু পর্যায়গত Utility বিশ্লেষণে ভোক্তার পক্ষে Total Utility নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
৫। Ordinal utility বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভোক্তা একটি দ্রব্যের utilityর সাথে অপর দ্রব্যের utilityর তুলনা করে কোনটিতে বেশি utility, কোনটিতে কম utility তা নির্ণয় করতে পারে।
কিন্তু পর্যায়গত utility বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভোক্তা বিভিন্ন utility স্তরের মধ্যে তুলনা করতে পারে ঠিকই কিন্তু কোনটিতে কতটুকু কম বা বেশি তা বলতে পারে না।
৬। সংখ্যাগত utility রৈখিক রূপান্তর পর্যন্ত অনন্য (Unique up to linear transformation)।
কিন্তু পর্যায়গত utility রৈখিক রূপান্তরযোগ্য নয়।
উপরোক্ত পার্থক্যগুলি থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাগত utility এবং পর্যায়গত utility বিশ্লেষণ উভয়টাই নিশ্চিত অবস্থায় ভোক্তার আচরণ ব্যাখ্যা করে।
আরও পড়ুন: চাহিদা, যোগান, চাহিদা বিধি
স্যার, প্রান্তিক উপযোগ এবং মোট উপযোগ এই বিষয়টি একটু ক্লিয়ার করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকতাম। অনেক ধন্যবাদ স্যার।
Thank you for going through.
Hopefully you will find them in the next article.
Best wishes
[…] তার সীমিত আয়ের মধ্যে থেকে সর্বাধিক উপযোগ লাভ করতে চায়। অর্থাৎ সীমিত আয়কে […]
[…] প্রদত্ত সম্পদকে রূপান্তরের মাধ্য়মে উপযোগ সৃষ্টি করে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী […]