যোগান কাকে বলে?

কোনো বিক্রেতা বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে নির্দিষ্ট দ্রব্য বা সেবার যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক থাকে তাকে অর্থনীতির ভাষায় ওই সময়ে ওই দামে ওই দ্রব্যের যোগান  বা সরবরাহ বা Supply বলে।

সাধারণ অর্থে যোগান বা সরবরাহ বলতে বাজারে প্রচলিত দামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বর্তমান থাকে তাকে বুঝানো হয়।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে গিয়ে একজন সাধারণ মানুষ দেখলেন যে বিক্রির জন্য় বস্তায় বস্তায় গাদি দেয়া পিয়াজ রয়েছে। তিনি স্বাভাবিকভাবেই মনে করবেন যে এই পিয়াজ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। অর্থাৎ তার কাছে এই পিয়াজের গাদিই কারওয়ান বাজারে ওই সময় পিয়াজের যোগান বা সরবরাহ।

পিয়াজের গাদি দেখে যদি তার এগুলিকে অনেক বেশি মনে হয় তিনি বলবেন পিয়াজের সরবরাহ বেশি বা প্রচুর; আর যদি কম মনে হয় তাহলে বলবেন পিয়াজের সরবরাহ কম।

কিন্তু অর্থনীতিতে কম, বেশি বলে কোন কথা নেই। কারণ, একজনের নিকট যা কম মনে হবে আরেকজনের নিকট তা-ই হয়তো বেশি মনে হবে। তাই, অর্থনীতিতে যা আছে তা হল পরিমাপ বা পরিমান।

আমরা তাকে সাহায্য করতে পারি। আমরা ওই সময় কারওয়ান বাজারের সমস্ত আড়ত বা দোকানের হিসাব নিয়ে দেখলাম ২ হাজার টন পিয়াজ আছে (যুক্তির খাতিরে একটা সংখ্যা ধরলাম)। এবার আমাদের ওই ব্যক্তি বলতে পারবেন কারওয়ান বাজারে আজ পিয়াজের সরবরাহ ২ হাজার টন।

যাক ল্যাঠা চুকে গেল। গোল, গোল, গোওওওওললললল কিন্তু না। একটুর জন্য বল চলে গেল গোল বারের বাইরে; গোল হল না।

অর্থনীতিবিদরা বললেন এটি সরবরাহ নয়।

কেন নয়? সরবরহ বলতে আমরা বুঝি আমি একটা জিনিস কিনতে গিয়ে বাজারে পাব কি না? ২হাজার টন পিয়াজ তো বিক্রির জন্য রয়েছে। তাহলে এই দুই হাজার টন পিয়াজকে সরবরাহ বলা যাবে না কেন?

এই কেনর উত্তর দিতে গিয়ে অর্থনীতিবিদরা মঞ্চে নিয়ে এলেন দাম।

বিভিন্ন দাম উল্লেখ করে এক একজনকে ক্রেতা সাজিয়ে বাজারে পঠানো হল।

মনে করি, ৩০ টাকা দামে বিক্রেতাদের ভিতর থেকে কয়েক জন মাত্র ২০০ টন পিয়াজ বিক্রি করতে রাজি হল। অর্থাৎ, ৩০ টাকা কেজি দামে সব পিয়াজ ক্রয় করা যাচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলে উঠলেন এই দেখুন ৩০ টাকা দামে সব পিয়াজ যখন কিনতে পারছেন না।

তখন বাজরে যত পিয়াজ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে তার সবটাই ৩০ টাকা দামে পিয়াজের সরবরাহ নয়। ৩০ টাকা দামে পিয়াজের সরবরাহ মাত্র ২০০ টন।

যখনই ৩২ টাকা দাম বলা হল অনেক বিক্রেতা এবার লাফিয়ে উঠলেন। তারা এবার ৫০০ টন পিয়াজ বিক্রি করতে রাজি হলেন। দেখলেনতো, বাইরে থেকে আর কোন পিয়াজ না এনেও পিয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেল। ৩৫ টাকা দামে ১২৫০ টন বিক্রি করতে রাজি। তাহলে ৩৫ টাকা দামে পিয়াজের সরবরাহ ১২৫০ টন।

গল্প বাদ দিয়ে এবার একাডেমিক আলাপে আসি।

কোনো বিক্রেতা বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে নির্দিষ্ট দ্রব্য বা সেবার যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক থাকে তাকে অর্থনীতির ভাষায় ওই সময়ে ওই দামে ওই দ্রব্যের যোগান বলে।

অধ্যাপক মেয়ার্স বলেন , “কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য দামে কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করা হয় তার তালিকাকে সরবরাহ বলে।”

অর্থনীতিবিদ রাগান (Ragan) ও থমাস (Thomas) – এর মতে, “একটি ফার্ম একটি নির্দিষ্ট দামে কেনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করে তাকেই সরবরাহ বলে।”

যোগানের বৈশিষ্ট্য

যোগানের বৈশিষ্ট্য

মনে রাখতে হবে,

নির্দিষ্ট সময়ে

নির্দিষ্ট দামে

নির্দিষ্ট দ্রব্যের

যে পরিমান

বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত বা উপস্থাপিত।

যোগানের নির্ধারকসমূহ Determinants of Supply

কতকগুলো বিষয়ের উপর কোনো দ্রব্যের যোগান নির্ভর করে । যেসব বিষয়ের উপর কোনো দ্রব্যের যোগান নির্ভর করে ঐসব বিষয়কে বলা হয় যোগানের নির্ধারক।

  1. পণ্যের দামঃ পণ্যের নিজস্ব দামের ওপর সরবরাহ প্রধানতঃ নির্ভর করে । সাধারণতঃ কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সরবরাহ বাড়ে এবং দাম কমলে সরবরাহ কমে। কারণ দাম বাড়লে মুনাফা বাড়ে , দাম কমলে মুনাফা কমে । ফলে সরবরাহ রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয়।
  2. অন্যান্য পণ্যের দামঃ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্রব্যের দাম বিবেচ্য দ্রব্যের যোগানকে প্রভাবিত করে । যেমন- চিনির বিকল্প গূড়ের দাম কমলে চিনির সরবরাহকমবে।
  3. পণ্যের চাহিদাঃ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে যোগানও বৃদ্ধি পাবে।
  4. উৎপাদনকারীর ভোগঃ উৎপাদনকারী নিজের উৎপাদিত দ্রব্য অধিক পরিমাণে ভোগ করলে বাজারে সেসব দ্রব্যের সরবরাহ হ্রাস পায় । বিপরীতভাবে , উৎপাদনকারী কম ভোগ করলে সেসব দ্রব্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। (হরিপদ তার গাভীর ২ লিটার দুধের আধা লিটার নিজেরা খায়, দেড় লিটার প্রতিবেশির নিকট বিক্রি করে। হরিপদর মেয়ে বেড়াতে এল। তার বাচ্চার জন্য বাড়তি দুধের প্রয়োজন, হরিপদর নিজের সংসারে দুধের ভোগ বেড় গেল। সে আর প্রতিবেশিকে আগের সমান দুধ দিতে পারে না। অর্থাৎ সরবরাহ কমে গেল।)
  5. কৌশলের পরিবর্তনঃ উৎপাদনে নতুন নতুন কৌশল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত হয় । এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে এবং একই দামে পূর্বের চেয়ে বেশি সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়।
  6. সময়ঃ সরবরাহ সিজনের উপর নির্ভর করে। বর্ষাকালে ইলিশ মাছের সরবরাহ বাড়ে। পৌষ মাসে ৫০০ টাকা কেজি দামে আমের সরবরাহের তুলনায় জৈষ্ঠ্য মাসে ৫০ টাকা দামে আমের সরবরাহ বেশি।
  7. সময় সীমাঃ ক্রয়াদেশে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া না হলে অনেক সময় চাহিদানুযায়ী সরবরাহ পাওয়া সম্ভব হয় না।
  8. আবহাওয়ার প্রভাবঃ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন বাড়ে এবং প্রতিকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় । যেমন— ধানের মৌসুমে একেবারেই যদি বৃষ্টি না হয় তবে ধান উৎপাদন ব্যাহত হয় । ফলে আবহাওয়া যোগানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
  9. কর ও ভর্তুকির প্রভাবঃ দ্রব্যের সরবরাহ অনেক সময় সরকারী নীতির উপর নির্ভর করে; যেমন- কর ও ভর্তুকি। কর আরোপ করলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় । ফলে উক্ত দ্রব্যের সরবরাহ হ্রাস পায় । অন্যদিকে , কোনো দ্রব্যের উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় । তাই সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
  10. যুক্ত যোগানঃ যেসব পণ্য যুক্তভাবে উৎপাদিত হয় তাদের একটির সরবরাহ বাড়লে অপরটির যোগানও বাড়ে । যেমন— চাউলের সরবরাহ বাড়লে দামের পরিবর্তন ছাড়াই কুড়ার যোগান বাড়ে। সরিষার তেলের যোগান বাড়লে সরিষার খৈলেরও সরবরাহ বাড়ে।
  11. বাজারের ভিন্নতাঃ যে বাজারে ক্রয় – বিক্রয়ের পরিমাণ বেশি, সে বাজারে দ্রব্যের সরবরাহ বেশি । যে বাজারে ক্রয় – বিক্রয়ের পরিমাণ কম, সে বাজারে দ্রব্যের সরবরাহ কম।
  12. জরুরী অবস্থাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি জরুরী অবস্থায় জিনিস পত্রের দাম বাড়লেও সরবরাহ বাড়ে না।

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?

দামের পরিবর্তনের সাথে যোগানের পরিবরতনের তুলনামূলক সম্পর্ক প্রকাশ করা হয় যোগানের স্থিতি স্থাপকতা দ্বারা।  কোন দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের ফলে যোগানের যে পরিবর্তন ঘটে, তাদের অনুপাতকে যোগানের স্থিতিস্থাপকতা বলে।

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা =

(যোগানের পরিমানের আপেক্ষিক পরিবর্তন) / (দামের আপেক্ষিক পরিবর্তন) ।

ধরি একটি দ্রব্যের দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, সরবরাহ ৩০০০ কেজি; দাম বেড়ে ৩৫ টাকা হওয়ায় সরবরাহ বেড়ে হল ৪০০০ কেজি। তাহলে –

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা = {(৪০০০-৩০০০)/৩০০০}/{(৩৫-৩০)/৩০} = {১০০০/৩০০০}/{৫/৩০} ={১/৩}/{১/৬} = ২।

অস্থিতিস্থাপকতা বা শূন্য স্থিতিস্থাপকতা কি?

দামের ব্যাপক পরিবর্তনের হলেও যোগানের তেমন পরিবর্তন না হলে তাকে শূন্য স্থিতিস্থাপকতা বা অস্থিতিস্থাপকতা বলে। শুন্য স্থিতিস্থাপক যোগান রেখা লম্ব অক্ষে সমান্তরাল।

পচনশীল দ্রব্য যার সংরক্ষের ব্যবস্থা নেই এবং যার উৎপাদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ সেসব দ্রব্যের যোগান দামের সাপেক্ষে  অস্থিতিস্থাপক। পচনশীল বলে দাম কমলেও সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে মজুদ করা সম্ভব হয় না। আবার উৎপাদন ব্যবস্থা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দাম বাড়লেও সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হয় না।

যেমন, একটা বাছুর জন্মের পর বড় হয়ে গাভী হওয়ার পর তার থেকে দুধ পেতে আড়াই থেকে ৩ বছর সময় লাগে। তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে ৩ বছর আগে পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করতে হয়। তাই, দুধের দাম বাড়লেই সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার, দুধের দাম কমলেই গাভীকে বলা যায় না দুধ দিও না, বা দোহনকৃত দুধ বিক্রির জন্য না নিয়ে মজুদ করে রাখা যায় না। তাই দুধের সরবরাহ অস্থিতিস্থাপক।

যোগান বিধি (The law of supply)

  • যোগান বিধি বলে যে উচ্চ মূল্য (higher price) বেশি পরিমাণ সরবরাহের দিকে পরিচালিত করে এবং কম দাম (lower price) কম পরিমাণ সরবরাহের দিকে পরিচালিত করে।
  • সরবরাহ রেখা (Supply curves) এবং সরবরাহ সূচী (supply schedules) সরবরাহ (supply) এবং মূল্যের (price) মধ্যে সম্পর্ককে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।

অর্থনীতিবিদরা সরবরাহ বলতে বোঝান যে পণ্য বা পরিষেবার কি পরিমাণ একজন উৎপাদক একটি নির্দিষ্ট দামে সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। একটি পণ্য বা পরিষেবার একটি ইউনিট বিক্রি করার জন্য সরবরাহকারী যা পান তা হল দাম (price)। দামের বৃদ্ধি প্রায় সবসময়ই সেই পণ্য বা পরিষেবার সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে এবং দামের হ্রাস সরবরাহের পরিমাণকে হ্রাস করে।

উদাহরণস্বরূপ, যখন পেট্রোলের দাম বেড়ে যায় এটি মুনাফা-সন্ধানী সংস্থাগুলিকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে: তেলের মজুদের জন্য অনুসন্ধান প্রসারিত করা, আরও তেলের জন্য ড্রিল করা এবং পরিশোধনের জন্য তেলের ট্যাঙ্কারে তেলকে প্লান্টে আনতে বেশি বেশি পাইপলাইনে বিনিয়োগ করা। সংস্থাগুলি নতুন তেল শোধনাগার তৈরি করে, গ্যাস স্টেশনগুলিতে পেট্রোল পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত পাইপলাইন এবং ট্রাক ক্রয় করে এবং আরও গ্যাস স্টেশন খুলে বা বিদ্যমান গ্যাস স্টেশনগুলিকে দীর্ঘ সময় খোলা রাখে।

অর্থনীতিবিদরা সরবরাহ করা দাম এবং পরিমাণের মধ্যে এই ইতিবাচক সম্পর্ককে বলে সরবরাহ বিধি – উচ্চ মূল্য উচ্চ পরিমাণ সরবরাহের দিকে পরিচালিত করে এবং কম দাম সরবরাহের কম পরিমাণের দিকে পরিচালিত করে। সরবরাহ বিধিতে সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অন্যান্য সমস্ত ভেরিয়েবল স্থির (constant) ধরা হয়।

সরবরাহ সূচী এবং যোগান রেখা (Supply schedule and supply curve)

  • সরবরাহ সূচী (supply schedule) হল একটি টেবিল যা ভিন্ন ভিন্ন দামে সরবরাহ করা পরিমাণ দেখায়।
  • সরবরাহ রেখা (supply curve) হল একটি গ্রাফ যা প্রতিটি মূল্যে সরবরাহকৃত পরিমাণ দেখায়। কখনও কখনও সরবরাহ রেখাকে সরবরাহ সূচী বলা হয় কারণ এটি সরবরাহ সূচীর একটি গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা।

পেট্রলের জন্য বাজার থেকে সরবরাহ সূচীর একটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল:

 

দাম (প্রতি গ্যালন)

সরবরাহের পরিমান

(মিলিয়ন গ্যালন)

$১.০০

৬০০

$১.২০

৬৬০

$১.৪০

৭২০
$১.৬০

৭৮০

$১.৮০

৮৪০
$২.০০

৯০০

$২.২০

৯৬০

 

প্রতি গ্যালন পেট্রলের দাম ডলারে এবং সরবরাহকৃত পরিমাণ মিলিয়ন গ্যালনে পরিমাপ করা হয়েছে।

নিচে অনুভূমিক অক্ষে পরিমাণ এবং উল্লম্ব অক্ষে গ্যালন প্রতি দাম সহ সরবরাহ রেখা হিসাবে একই তথ্য দেখানো হয়েছে।

যোগান

যোগান রেখা

গ্রাফটিতে একটি ঊর্ধ্বমুখী ঢালযুক্ত যোগান রেখা দেখানো হয়েছে যা যোগান বিধিকে উপস্থাপন করেছে।

যোগান রেখাটি সরবরাহ সূচী থেকে পয়েন্টগুলি গ্রাফ করে এবং তারপরে তাদের সংযোগ করে তৈরি করা হয়েছে। সরবরাহ রেখার ঊর্ধ্বমুখী ঢাল সরবরাহ বিধিকে চিত্রিত করে- যে দাম বাড়লে সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।

যোগান রেখার আকৃতি পণ্য অনুসারে কিছুটা পরিবর্তিত হবে: খাড়া, ফ্লাট, সোজা বা আরও বাঁকা। তবে, প্রায় সব যোগান রেখা একটি মৌলিক সাদৃশ্য ধরণ করে: বাম থেকে ডানে উর্ধমুখী এবং যোগান বিধিকে চিত্রিত করে। দাম বাড়ার সাথে সাথে সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে, দাম কমার সাথে সাথে সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পায়।

যোগান ও চাহিদা

অর্থনীতির ভাষায় চাহিদা এবং যোগান বলতে কোন দ্রব্য বা সেবার ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বিদ্যমান বাজার সম্পর্ক বোঝায়। বাজারে কোন পণ্যের দাম এবং সরবরাহ কিরূপ হবে তা চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সম্পর্ক দ্বারা নির্ধারিত হয়। ব্যষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি মৌলিক সম্পর্ক। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাখ্যার পাশাপাশি নতুন নতুন তত্ত্ব তৈরির ক্ষেত্রেও এই সম্পর্ক প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।

আন্টোনিও অগাস্টিন কর্নো এটি সর্বপ্রথম সরবরাহ এবং চাহিদা  সম্পর্ক বর্ণনা করেন এবং আলফ্রেড মার্শাল এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

এই মডেলে মুক্ত প্রতিযোগিতামুলক বাজারে পণ্যের প্রকৃত বিক্রয় মূল্যই ভোক্তার চাহিদা এবং বিক্রেতার সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য নির্দেশ করে এবং একটি সাম্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।

যোগান রেখা ও চাহিদা রেখা

যোগান ও চাহিদা রেখা

যোগান ও চাহিদা রেখা

চিত্রে P দ্বারা মূল্য, Q দ্বারা দ্রব্যের পরিমান, S দ্বারা সরবরাহ, D দ্বারা চাহিদা নির্দেশ করা হয়েছে। পণ্যের দাম নির্ধারণ হয় চাহিদা এবং সরবরাহ রেখার ছেদ বিন্দু বা  ভারসাম্য দ্বারা, যে অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য, বিক্রেতা বিক্রি এবং ক্রেতা ক্রয় করতে সম্মত থাকে। চিত্রটি আরও দেখাচ্ছে কিভাবে চাহিদা রেখার স্থান পরিবর্তন পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে।